Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 2:52 pm

তিন ফিলিং স্টেশন নিয়ে ধূম্রজাল!

পলাশ শরিফ সাঈদ সবুজ: প্রায় ৩২ বছর আগে ইন্দো-বার্মা পেট্রোলিয়ামের কাছ থেকে তিনটি ফিলিং স্টেশনের মালিকানা পায় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী কোম্পানি ‘যমুনা অয়েল’। কিন্তু তিন দশকেও ওই ফিলিং স্টেশনগুলোর দখল নিতে পারেনি কোম্পানিটি। বরং ওই ফিলিং স্টেশনগুলোর জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন-নামজারি করা হয়েছে। এ কারণে কাগজে-কলমে থাকলেও ওই তিন ফিলিং স্টেশনের অস্তিত্ব ও মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তবে কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ওই ফিলিং স্টেশনগুলোকে যমুনার সম্পত্তি বলেই দেখানো হচ্ছে। অন্যদিকে ওই ফিলিং স্টেশনগুলোর হদিস না পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে নিরীক্ষকের প্রশ্নের মুখে পড়ছে যমুনা অয়েল।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ইন্দো-বার্মা পেট্রোলিয়ামের (আইবিপিসিএল) সব সম্পত্তি ও দায় যমুনা অয়েল কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই সময়ে ইন্দো-বার্মা পেট্রোলিয়ামের সম্পদের তালিকায় পাহাড়তলির ঢাকা ট্রাংক রোডে ১২ শতক জমিতে পাহাড়তলি ফিলিং স্টেশন, হাটহাজারীতে ১২ শতক জমিতে হাটহাজারী ফিলিং স্টেশন ও চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ২৭ শতক জমিতে কালুরঘাট ফিলিং স্টেশনের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর জের ধরে ওই তিনটি ফিলিং স্টেশনকে যমুনা অয়েলের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তিন দশকে ওই সম্পত্তির দখল নিতে পারেনি যমুনা অয়েল। বরং এখন ওই ফিলিং স্টেশনগুলোর হদিসই মিলছে না, যে কারণে কয়েক বছর ধরে ওই সম্পদের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান।

আলাপকালে যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ওই ফিলিং স্টেশনগুলো আইবিপির কাছ থেকে পাওয়া। কিন্তু মালিকানার সপক্ষে তেমন কাগজপত্র আমাদের হাতে নেই। বিস্তারিত তথ্যও নেই, যে কারণে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ফিলিং স্টেশনগুলোর মালিকানা আইবিপির ছিলো কি না এখন সেই প্রশ্নও উঠছে। অনেকে জমির মালিকানা দাবি করছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আগামী এজিএমের আগেই এ জটিলতার সমাধান করা হবে।’

দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, ইন্দো-বার্মা পেট্রোলিয়ামের হিসেবে পাহাড়তলী ফিলিং স্টেশন পাহাড়তলীর জনৈক আমজাদ আলীর ছেলে হাজী ইয়াকুব আলী, হাটহাজারী ফিলিং স্টেশন জনৈক আলী মিয়া সওদাগরের ছেলে সিদ্দিক সওদাগর ও কালুরঘাট ফিলিং স্টেশন জনৈক আমজাদ খানের ছেলে ইসলাম খানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের বংশধররা ওই জমিগুলোর মালিকানা দাবি করেছে। ফিলিং স্টেশনগুলো পরিত্যক্ত হওয়ার পর জমিগুলো দখলে রেখেছে। হাতবদলের পর পাহাড়তলী ফিলিং স্টেশনের ১২ শতক জমির বর্তমান মালিক আবদুল হালিম কোম্পানি। তার ছেলেরাই একটি বেসরকারি কোম্পানির কাছে ভবনটি ভাড়া দিয়েছে। কালুরঘাট ও হাটহাজারী ফিলিং স্টেশনও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের পরিত্যক্ত হাটহাজারী ফিলিং স্টেশনের জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে তথ্য মিলেছে।

এদিকে যমুনা অয়েলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নিরীক্ষকের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিক্রয় বিভাগের মাধ্যমে ওই তিনটি ফিলিং স্টেশনের দখলদারদের কাছ থেকে মালিকানার সপক্ষে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। পাহাড়তলী ফিলিং স্টেশনের জমির মালিকানার কাগজপত্র হাতে এসেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এখনও বাকি দুই ফিলিং স্টেশনের জমির বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। পাহাড়তলীর জমি আইবিপির নাকি ব্যক্তিমালিকানার, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মালিকানার সপক্ষে ইন্দো-বার্মার কাছ থেকে পাওয়া সম্পদের তালিকা ছাড়া কোম্পানিটির কাছে অন্য কোনো কাগজপত্রও নেই। তাই পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পুরোনো কাগজপত্র সংগ্রহ করে বিষয়গুলো গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে। বাকি দুটি ফিলিং স্টেশনের কাগজপত্র পাওয়ার পরই বিস্তারিত বলা যাবে।

অসমর্থিত সূত্রের দাবি, যমুনা অয়েলের পুরোনো তিনটি ফিলিং স্টেশনই দৃশ্যমান। ফিলিং স্টেশনগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ‘হদিস’ পাচ্ছে না যমুনা অয়েল। যমুনা অয়েলের নীরবতার সুযোগে মনগড়া দলিলপত্র উপস্থাপন করে জমিগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধন বা নামজারি হয়েছে। এর পেছনে যমুনা অয়েলের পুরোনো লোকজনের যোগসাজশ রয়েছে। এখন মালিকানার সপক্ষে কাগজপত্র না থাকায় ও ব্যক্তিনামে নিবন্ধন-নামজারির দোহাই দিয়ে জমিগুলোর মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।