Print Date & Time : 17 August 2025 Sunday 11:17 pm

তিন বছরের সুদ ভর্তুকিসহ চার সুবিধা চান পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা

শেখ আবু তালেব: নতুন করে চারটি সুবিধা চেয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চলতি মূলধনি ঋণ পরিশোধে এক বছরের পরিবর্তে তিন বছরের সুবিধা এবং একই সঙ্গে সাড়ে চার শতাংশ সুদ ভর্তুকি সুবিধা আরও দুই বছর বাড়িয়ে দেয়া।

গতকাল এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৈরি পোশাক খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন দ্য বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) নেতারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিজিএমইর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এসএম মান্নান কচি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মূলত তিনটি দাবি নিয়ে গতকাল আলোচনা হয়। এ সময় বিজিএমইর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেবা ও শিল্প খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীকালে আরও বাড়ানো হয়।

কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান চলতি মূলধন হিসেবে এ তহবিল থেকে আগের নেয়া চলতি মূলধনের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) ৩০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবে। এ ঋণের বিপরীতে সাড়ে চার শতাংশ ঋণ দেবেন উদ্যোক্তারা। অবশিষ্ট সাড়ে চার শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার। উদ্যোক্তাদের সুবিধার জন্য সরকার এ সুদ ভর্তুকি দেবে ব্যাংকে। কিন্তু এ সুদ ভর্তুকি সুবিধা মাত্র এক বছরের জন্য নির্ধারিত হবে। এ হিসাবে গত বছর বা চলতি বছর এ তহবিল থেকে নেয়া ঋণের সুবিধাটি এক বছরের জন্য প্রযোজ্য হবে।

গতকালের সভায় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, এ ভর্তুকি সুবিধা তিন বছরের জন্য দিতে। চলতি মূলধনের বিপরীতে সাড়ে চার শতাংশ সুদ ভর্তুকির এ সুবিধাটি ব্যবসায়ীরা চাইছেন এক বছরের পরিবর্তে তিন বছরের জন্য। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের জন্যও তিন বছরের সুবিধা চেয়েছেন তারা।

তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর দেয়া প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা আছে ব্যাংক ও গ্রাহক সুবিধার জন্য আলোচনার ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো যাবে। কিন্তু সাড়ে চার শতাংশ সুদ ভর্তুকি সুবিধা মাত্র এক বছরের জন্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা আছে, ‘এ প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ/বিনিয়োগ একটি চলমান ঋণ/বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে। চলমান ঋণ/বিনিয়োগটি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল আন্ডার স্টিমুলাস প্যাকেজ নামে অভিহিত হবে এবং সিএল-২ বিবরণীতে রিপোর্ট করতে হবে। প্রতিটি ঋণ/বিনিয়োগের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ এক বছর। আলোচ্য প্যাকেজের আওতায় এ ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা নবায়ন করা যাবে না। তবে ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লেনদেন সন্তোষজনক হলে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধাটি নবায়ন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ের জন্য সরকারের নিকট হতে সুদ/মুনাফা বাবদ কোনো ভর্তুকি প্রাপ্য হবে না।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না এলে নগদ সুবিধা পাওয়া যাবে না। কিন্তু উদ্যোক্তরা বলছেন, অনেক সময় নির্দিষ্ট কোনো চালানের বিপরীতে যাওয়া রপ্তানি পণ্য দেশে আসে না। শুধু ওই রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে সরকারের নগদ প্রণোদনা সুবিধা স্থগিত করা যেতে পারে। একই প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন চালানে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা দেয়া যেতে পারে। বর্তমানে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে পুরো গ্রুপকে খেলাপির তালিকায় নেয়া হয়। এ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য শুধু খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানকেই খেলাপি দেখানো যেতে পারে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনেই তা রয়েছে। এখন গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচিত খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার।

এ ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) ঋণের সুদহার দুই শতাংশ থেকে কমিয়ে আনতে প্রস্তাব দেয় বিজিএমইএ। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিটি বিষয়ই অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সরকারের নীতিনির্ধারক জড়িত। তাদের কাছ থেকেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন দিতে পারে শুধু।