তিন বছর আগের অবস্থানে নেমে গেছে ডিএসই সূচক

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বড় পতনের ধাক্কায় এবার প্রায় তিন বছর আগের অবস্থানে চলে গেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক। গতকাল ২৮ পয়েন্ট হ্রাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে সূচক দুই বছর ১১ মাস ১৭ দিন আগের অবস্থানে নেমে যায়। দিন শেষে সূচকের অবস্থান হয় চার হাজার ৬৭০। এর আগে ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৬৬৪ পয়েন্টে।

এদিকে পতন যতই বড় হচ্ছে, পুঁজিবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। সম্প্রতি বড় পতন তাদের আরও ভাবিয়ে তুলছে। ফলে বাজার স্থিতিশীল হবেÑএতদিন যারা এ কথা ভেবে অপেক্ষা করছিলেন, তারাও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা। কারণ এসব বিনিয়োগকারীর লোকসানের বোঝা প্রতিদিনই ভারি হচ্ছে।

গত এক মাসের বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে লেনদেন হয়েছে ২১ কার্যদিবস। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ কার্যদিবস সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে।  বাকি ১৬ কার্যদিবসে বড় এবং মাঝারি ধরনের পতন দেখা গেছে। এর জের ধরে এক মাসের ব্যবধানে সূচকের পতন হয়েছে ৩০৫ পয়েন্ট। এক মাস আগে ডিএসইর সূচকের অবস্থান ছিল চার হাজার ৯৭৫ পয়েন্ট, গতকাল যা স্থির হয়েছে চার হাজার ৬৭০ পয়েন্টে। একই সময়ে উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং ফান্ডের বাজার মূলধনও। এ সময় বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর লেনদেন ঘুরপাক খাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটির মধ্যে।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে দেখা যায়, প্রতিদিনই উধাও হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া একযোগে কমছে তালিকাভুক্ত সব খাতের শেয়ারের দর, যার জের ধরে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার মূলধন। গতকাল একদিনেই বাজার মূলধন কমে গেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

এই পরিস্থিতিতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা, বাড়ছে ক্ষোভ। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ে তারা খুবই শঙ্কিত। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের অবস্থা আরও করুণ হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেন।

বিনিয়োগকারীরা জানান, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে এমন অপেক্ষায় থেকেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। তারা বলেন, প্রায় সব ধরনের শেয়ার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থায় থাকার পরও বাজারে বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে তা কাম্য নয়। এটা কেউ কৃত্রিমভাবে করছে কি না,  তাদের চিহ্নিত করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে আলমগীর হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, বহুদিন থেকে বাজারে নীরব দরপতন চলছে। অথচ বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখছে না। সবার আগে কারা বাজার নিয়ে কারসাজি করছে, তাদের বের করা দরকার। সেটা করা হচ্ছে না। ফলে বাজারও তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসছে না।

এদিকে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বিনিয়োগকারীরা। মূলত তাদের মনোগত কারণেই পতন থামানো যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। তবে এর জন্য তারা একা দায়ী, তা বলব না। যাদের বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার কথা, তারা বর্তমানে চুপ রয়েছে। ফলে বাজারচিত্র বদলাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে বর্তমানে বাজারে বেশিরভাগ শেয়ার সস্তা, কিন্তু এখানে নতুন অর্থ না এলে এসব শেয়ার আরও সস্তা হয়ে যাবে।

সাম্প্রতিককালের বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। ফলে তখন বাজারে আসেন নানা শ্রেণির মানুষ। কিন্তু বছরের শেষদিকে নানা ইস্যুতে বাজার পতন শুরু হয়। ফলে বেকায়দায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা।