Print Date & Time : 23 July 2025 Wednesday 1:53 pm

তিন ব্যাংকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ

রোহান রাজিব: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে গ্রাহকরা এক হাজার ছয়শ’র বেশি অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের ৯০ শতাংশই নিষ্পত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই এক মাসে গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এক্সিম ও এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের (এফআইসিএসডি) মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

জানা যায়, জানুয়ারিতে গ্রাহকরা স্বীকৃত বিলের বিপরীতে ম্যাচুরিটি হওয়ার পরও বিল না পাওয়া, ঋণ ও অগ্রিম এবং সাধারণ ব্যাংকিং-সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন। এছাড়া রেমিট্যান্স, কার্ড সেবা, ব্যাংক গ্যারান্টি, কাক্সিক্ষত সেবা না পাওয়া, ফি অ্যান্ড চার্জ, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রটিপূর্ণ নোট বিনিময় এবং চেক-সংক্রান্ত অভিযোগও করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ করা যায়। ই-মেইলের মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে, মোবাইল ফোন অ্যাপে, টেলিফোনে ও ডাকযোগেÑএই পাঁচ উপায়ে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। সেবা-সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক সমাধানের জন্য ১৬২৩৬ নম্বরে ফোন করে যে কেউ সমস্যা জানাতে পারেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা টেলিফোনে বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৫৩টি অভিযোগ করেন, যার সবকটিই বাংলাদেশ ব্যাংক নিষ্পত্তি বা সমাধান করেছে। এছাড়া ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন অ্যাপ ও ডাকযোগে এক হাজার ৩৩৪টি অভিযোগ করেন। এর মধ্যে এক হাজার ১৭১টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে, বাকি ১৬৩টি অভিযোগ এখনও নিষ্পত্তি করা হয়নি। জানুয়ারিতে সর্বমোট এক হাজার ৬৮৭টি অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে এক হাজার ৫২৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অভিযোগ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ জনসচেতনতার অভাব। ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়ত বাজারে নতুন নতুন পণ্য বা সেবা নিয়ে আসছে। কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালায় না। এ কারণে ক্ষুদ্র সমস্যায়ও মানুষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ করেন, যা চাইলে ব্যাংকগুলোই সমাধান করতে পারে। এছাড়া দিন দিন বাড়ছে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন। মোবাইল ব্যাংকিং এখন খুবই জনপ্রিয় একটি লেনদেন মাধ্যম। তাই ব্যাংকিং সেবাগ্রাহীতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রমেই বাড়ছে ব্যাংকের সেবা পরিধি। অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হচ্ছে পুরো ব্যাংক খাত। তাই অভিযোগের সংখ্যা বাড়াই স্বাভাবিক।

জানা যায়, জানুয়ারিতে গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির বিরুদ্ধে। এরপর এক্সিম ও এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান শেয়ার বিজকে বলেন, দেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। তাদের গ্রাহকসংখ্যাও বেশি। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি হবে এটা স্বাভাবিক। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের পণ্য বেশি। বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের কোনো একটা সমস্যা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। সেই তুলনায় সরকারি ব্যাংকের এসব সেবা অনেক কম। তাই তাদের ক্ষেত্রে অভিযোগের পরিমাণও কম।

জানা যায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেয়া হয়।

তথ্যমতে, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা ৭৩ হাজার ২৪৮টি অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর মধ্যে টেলিফোনের মাধ্যমে ২৬ হাজার ২১১টি, যার সবকটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া ৪৭ হাজার ৩৭টি অভিযোগ করা হয় ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল ফোন অ্যাপ এবং ডাকযোগে, যার মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৯৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ২৪৪টি অভিযোগ এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সর্বমোট ৭৩

হাজার ২৪৮টি অভিযোগের মধ্যে ৭৩ হাজার ৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, আদালতে বিচারধীন মামলা, আইনগত ও অন্যান্য জটিলতার কারণে এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি। যেসব অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়নি, তা আর কখনও যে হবে না, তা নয়। প্রতিটি অভিযোগই নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এদিকে গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এফআইসিএসডি বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৬টি পরিদর্শন করেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আটটি পরিদর্শন করেছে।