তিন সপ্তাহে কভিডে মৃতদের ৬১% ডায়াবেটিস আক্রান্ত

নজরুল ইসলাম:কভিডে আক্রান্ত হয়ে গত তিন সপ্তাহে মারা গেছেন ৭৫ জন। তাদের মধ্যে কো-মরবিডিটিতে (দুরারোগ্য রোগ) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ছিল ৪৫। তবে মৃতদের মধ্যে ৪৬ জন ছিলেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা মোট মৃত্যুর ৬১ দশমিক তিন শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এপিডেমিলজিওকাল রিপোর্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৯তম সপ্তাহে (৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর) মারা যান ২৭ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জন কো-মরবিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন, যা শতকরা ৬৬ দশমিক সাত শতাংশ। ৪৮তম সপ্তাহে (গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর) মৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৪ জনই কো-মরবিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন, যা ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ। ৪৭তম সপ্তাহে (২২ থেকে ২৮ নভেম্বর) মৃত ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জন কো-মরবিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন। অর্থাৎ ৫২ শতাংশ রোগী কো-মরবিডিটিতে আক্রান্ত ছিলেন। ৪৮তম সপ্তাহের চেয়ে ৪৯তম সপ্তাহে কো-মরবিডিটির হার পাঁচ দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে। আর ৪৭তম সপ্তাহের চেয়ে ৪৮তম সপ্তাহে কো-মরবিডিটির হার আট দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. ইউনুস জানান, গত ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৯তম সপ্তাহে কভিডে মৃত ২৭ জনের মধ্যে ৪৪ দশমিক চার শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।

তার আগের সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক সপ্তাহে (৪৮তম সপ্তাহ) কভিডে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৪ দশমিক তিন শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তার আগের ৪৭তম (২২ থেকে ২৮ নভেম্বর) সপ্তাহে মারা যান ২৫ জন। তাদের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।

কভিডে মৃতদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তরা। ৪৯তম সপ্তাহে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন ৫৫ দশমিক ছয় শতাংশ। ৪৮তম সপ্তাহে ৬৪ দশমিক তিন শতাংশ। ৪৭তম সপ্তাহে ছিলেন ৪৬ দশমিক দুই শতাংশ রোগী।

মৃতদের মধ্যে ৪৯তম সপ্তাহে বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন ১৬ দশমিক সাত শতাংশ। ৪৮তম সপ্তাহে ছিলেন ১৪ দশমিক তিন শতাংশ। ৪৭তম সপ্তাহে ছিলেন ১৫ দশমিক চার শতাংশ। মৃতদের মধ্যে ৪৯তম সপ্তাহে হƒদরোগে আক্রান্ত ছিলেন ২২ দশমিক দুই শতাংশ। ৪৮তম সপ্তাহে ছিলেন ২১ দশমিক চার শতাংশ। ৪৭তম সপ্তাহে ছিলেন ৩০ দশমিক আট শতাংশ।

৪৮তম সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন ৩৫ দশমিক সাত শতাংশ। ৪৭তম সপ্তাহে ২৩ দশমিক এক শতাংশ। ৪৯তম সপ্তাহে কিডনি আক্রান্ত কেউ ছিলেন না। লিভারজনিত রোগে ৪৮তম সপ্তাহে সাত দশমিক এক শতাংশ রোগী ছিলেন। ৪৭তম সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে লিভারজনিত রোগে কেউ আক্রান্ত ছিলেন না।

মৃতদের মধ্যে থাইরয়েডজনিত রোগে ৪৮তম সপ্তাহে আক্রান্ত ছিলেন সাত দশমিক এক শতাংশ রোগী। ৪৭তম সপ্তাহে সাত দশমিক সাত শতাংশ রোগী থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃতদের মধ্যে ৪৭তম সপ্তাহে নিউরোলজিকাল রোগে আক্রান্ত ছিলেন সাত দশমিক সাত শতাংশ রোগী। তবে ৪৮তম সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে নিউরোলজিকাল রোগে আক্রান্ত কেউ ছিলেন না।

এদিকে ৪৮তম সপ্তাহে (২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর) মৃত ২৩ জনের মধ্যে ছিলেন ১১ পুরুষ আর ১২ নারী। শতাংশের হিসেবে গত সপ্তাহে পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যু বেশি হয়েছেÑপুরুষ শতকরা ৪৭ দশমিক আট শতাংশ আর নারী ৬২ দশমিক দুই শতাংশ। ৪৮তম সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন পাঁচজন, অর্থাৎ ২১ দশমিক সাত শতাংশ। বাকি ১৮ জন টিকা নেননি। অর্থাৎ ৭৮ দশমিক তিন শতাংশ টিকা নেননি। অধিদপ্তর জানিয়েছে, যে পাঁচজন টিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে দুজন প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। আর বাকি তিনজন দুই ডোজ, অর্থাৎ টিকার সম্পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করেছিলেন।