Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 2:40 am

তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে অবাধে চলছে পাথরবোঝাই ট্রাক

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত, লালমনিরহাট : দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে প্রতিদিন পার হয় অর্ধশতাধিক মাত্রাতিরিক্ত পাথর ও অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাক। এতে ব্যারাজটি রয়েছে হুমকিতে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কয়েক কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এবং নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া নামক স্থানে অর্থাৎ দুই জেলার সীমানা নির্ধারণী তিস্তা নদীতে এ ব্যারাজ অবস্থিত। প্রথম দিকে ভারী মালামালসহ যানবাহন পারাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। পরে ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ ২০ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু সেটি উপেক্ষা করে ব্যারাজের কিছু অসাধু কর্মকর্তার জোগসাজশে ১০ চাকার অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাকও চলাচল করে প্রতিনিয়ত। এতে ব্যারাজের ২, ২০, ২১ ও ২৪ নম্বর গেটের ওপরের পলেস্তারায় ফাটল ধরে। ফলে ব্যারাজের স্থায়িত্ব রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর তিস্তা ব্যারাজের উভয় পাশে সাইনবোর্ড টানিয়ে সব ধরনের ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

ওই সময় ব্যারাজের দু’দিকের প্রধান ফটকও বন্ধ রাখা হয়। আর সড়কে বসানো হয় লোহার খুঁটি; যা বর্তমানে ইট-পাথরের পিলারের রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু সেই পিলারের মাঝখানে ফাঁকা অংশ দিয়ে শুধু হালকা যান চলাচল করার কথা থাকলেও বর্তমানে পাথরবোঝাই ট্রাক পারাপার হচ্ছে। আর অব্যাহত এই ভারী যানবহন চলাচল করছে ব্যারাজের নিরাপত্তায় থাকা আনসার ও প্রবেশদ্বারে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের সামন দিয়ে। অথচ তারা দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। ফলে ব্যারাজটি হুমকির মুখে পড়েছে আবারও।

তিস্তা ব্যারাজের নিরাপত্তায় থাকা আনসার ক্যাম্পের ইনচার্জ জোনাব আলী (পিসি) জানান, একটা গাড়ি আটক করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০ জন নেতা এসে বলেন আপনি কেন গাড়ি আটক করেছেন। গত চার-পাঁচ দিন আগে ইউএনও স্যারের নির্দেশে একটি গাড়ি আটক করা হয়। ইউএনও স্যার চলে যাওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার (এসও) তানভির সাহেব বলেন, গাড়ি ব্যারাজের ভেতর দিয়ে ঢুকবে এবং ওজন ২০ টনের মধ্যে হবে সেসব গাড়ি আটক করবেন না। পরে ইউএনও স্যারের নির্দেশে আটককৃত গাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন। তবে পাথরবোঝাই ট্রাকের ওজন বেশি হলেও ট্রাকগুলো আটক করলে

ট্রাকসহ গাড়ির ওজন কাগজে দেখানো হয় আট থেকে ১০ টন। ফলে পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো আটক করার কোনো সুযোগ নেই। যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা নির্বাহী অফিসার

পাথরবোঝাই ট্রাক ব্যারাজের ওপর দিয়ে পারাপার হতে পারবে না, লিখিত এমন নির্দেশনা দিলে তবেই তারা পাথরবোঝাই ট্রাক আটক করতে পারবেন, এর আগে নয়।

দোয়ানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল রাজ্জাক জানান, ভারী যান চলাচলে কোনো উৎকোচ নেওয়া হয় না। তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে কোন মাপের গাড়ি যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য সড়কের মাঝে তারা গাড়ির মাপ অনুয়াযী পিলার বসিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার (এসও) তানভির হোসেন জানান, আমার সম্পর্কে যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা পাথরের গাড়ি পারাপার করেন তারা এক পাড়ে পাথর নামিয়ে ট্রলির মাধ্যমে আরেক পাড়ে গিয়ে বড় গাড়িতে পাথর তুলে পারাপার করেন। বর্তমানে আমাদের সেকশনে গাড়িসহ ২০ টনের মধ্যে যেসব গাড়ির ওজন সেগুলো পারাপার করতে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ানীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ব্যারাজের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করছে এমন অভিযোগ তিনিও পান। কিন্তু যেভাবে সড়কের মাঝখানে পিলার দেওয়া হয়েছে এতে করে ভারী যানবাহন চলাচল করার কথা নয়। এরপরেও যদি ভারী যানবাহন চলাচল করে তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বর্তমানে যে সেকশন আছে এতে পাঁচ থেকে ছয় টন আর ওভারলোড হলে সর্বোচ্চ ১০ টন নেওয়া যাবে।