শেয়ার বিজ ডেস্ক: তুরস্কের অর্থনীতি ঢেলে সাজাতে কাজ করছে তুর্কি সরকার। এ লক্ষ্যে দেশটি এনার্জি, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, রিয়েল স্টেট, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাংকিং ইন্স্যুরেন্স ও প্রতিরক্ষা খাত আরও শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ প্রদান করছে বিনিয়োগকারীদের। উপসাগরীয় অন্যতম ধনী দেশ কাতার দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে কাতার আরও ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে তুরস্কে। ইতোমধ্যে কাতারের ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। ডেইলি শাবা।
তুর্কি কর্মকর্তারা জানান, আগামী বছর আরও ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার। এজন্য উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে বলেও জানান তারা। আর এ ১৯ বিলিয়ন ডলারের ‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’র মাধ্যমে ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বাকি চার বিলিয়ন ডলার কাতারের একটি বেসরকারি উন্নয়ন ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হবে জানানো হয়।
তুরস্ক প্রত্যাশা করছে, তার দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে আগামী বছর ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আসবে, যেখানে কাতার হবে বড় বিনিয়োগকারী দেশ। পর্যটন, জ্বালানি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাতার বিনিয়োগ করতে চায়।
মিডল ইস্ট ইকোনমি প্লাটফর্মের প্রধান (মিইইপি) এর্ডিন ওজেল বলেন, ইতোমধ্যে কাতার আগামী বছর তুরস্কে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্ক ও কাতারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে কাতার এ বিনিয়োগ করছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তুর্কি অর্থনীতিতে কাতারের বিনিয়োগ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কাতার ইস্তাম্বুলে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এক বিলিয়ন বিনিয়োগ ডলার করতে চায়। এছাড়া তুর্কি টেলিকম খাতেও বিনিয়োগ বাড়াতে চায় কাতার।
সম্প্রতি সৌদি জোটের কাতার বøকের পর তুরস্ক তাদের পাশে দাঁড়ায়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রোসেফ তায়েফ এরদুয়ান কাতারের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠান। প্রসঙ্গত, ২৭ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ কাতার সম্পূর্ণ খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
তুর্কি এগ্রিকালচারাল ফার্ম ‘হাসাদ ফুড’-এ ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার। দেশটি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন’ নির্মাণ করতে চায় ইস্তাম্বুলে। এজন্য পর্যটন খাতে আড়াই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে কাতার।
তুর্কি অর্থমন্ত্রী নিহাত জেবিকি বলেন, বর্তমানে ইস্তাম্বুলে কাতারের কোম্পানিসহ ১২১টি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে কাতার থেকে তুরস্কে এফডিআই এসেছে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার, যেখানে এফডিআই তালিকায় তুরস্ক ১৯তম অবস্থানে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৮৩৪ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার। আর চলতি বছরের প্রথম আট মাসের রেকর্ড ৬৩৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিনিয়োগকারীরা তুর্কি রিয়েল স্টেট খাতে ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ করছে, ১৮ বিলিয়ন তুর্কি লিরা বা চার দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলরের সমান যার মূল্য। তুর্কি ল্যান্ড রেজিস্টার এবং ক্যাডাস্টরের মহাপরিচালক জানান, ২০১২ সাল থেকে তারা পারস্পরিক সহযোগিতায় রিয়েল স্টেট খাত সমৃদ্ধ করছেন।
এদিকে ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ পোল্যান্ড তুরস্কে বিনিয়োগ ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে বলে জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদুয়ান। পোল্যান্ড সফররত তুর্কি প্রেসিডেন্ট দু’দেশের বাণিজ্য আরও সুদৃঢ় করতে একমত হয়েছেন। তুরস্কে বর্তমানে ছয় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে পোল্যান্ডের। আগামী পাঁচ বছরে পোল্যান্ড এ বিনিয়োগ করবে। ১৭ ও ১৮ অক্টোবর তুর্কি প্রেসিডেন্ট পোলেন্ডে সফর করছেন। তুরস্কের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পর্যটন খাতে পোল্যান্ড বিনিয়োগ করতে চায় বলে জানান তুর্কি জ্বালানিমন্ত্রী।
গত ১৫ বছরে তুরস্ক ২০০ বিলিয়ন বিনিয়োগ গ্রহণ করছে বলে জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে, যেখানে গেøাবাল মার্কেটের দুই শতাংশ এফডিআই অর্জন করেছে বলে ধারণা করা হয়। চলতি বছরের প্রথমার্থে স্পেন থেকে চার দশমিক এক বিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছে। নেদারল্যান্ডস থেকে ৮২১ মিলিয়ন ডলার, কাতার থেকে ৫৪১ মিলিয়ন ডলার, আজারবাইজান থেকে ৩০৮ মিলিয়ন ডলার এবং বেলজিয়াম থেকে ২১৩ মিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছে তুরস্কে।