Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 7:38 pm

তেলের উৎপাদন কমাতে আলোচনায় ওপেক প্লাস

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ওপেক ও এর সহযোগী দেশগুলো তেলের উৎপাদন হ্রাস করার বিষয়ে আলোচনা করছে। অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের ঘরে নেমে আসায় দিনে এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে চায় দেশগুলো। তিনটি সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বর্তমানে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে তেল উৎপাদনকারীরা জোগান কমিয়ে দাম বাড়াতে চায়।

তেল উৎপাদনকারীদের জোট ওপেক প্লাসের সদস্য ও এর সহযোগী দেশগুলো বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশ জোগান দেয়। ফলে তারা কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে। এ জোটের নেতৃত্বে রয়েছে রাশিয়া।

ওপেক প্লাসের তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, আজ রোববার ভিয়েনায় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আগে তেল উৎপাদন হ্রাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আজকের বৈঠকের আগে গতকাল শনিবার ওপেক এবং সহযোগী দেশগুলোর মন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

ওপেক কয়েক বছর ধরেই দফায় দফায় তেলের উৎপাদন হ্রাস করেছে। এর আগে শেষবার গত এপ্রিলে বিস্ময়করভাবে দিনে দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ব্যারেল বাধ্যতামূলক ও ১৬ লাখ ব্যারেল তেল স্বতঃপ্রবৃত্তভাবে হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো। অর্থাৎ ২০ লাখ ব্যারেল পাশাপাশি সহযোগী দেশগুলো চাইলে দিনে আরও ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ১৬ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে পারে। এরপর তারা আবার এই উৎপাদন হ্রাসের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।

এই উৎপাদন হ্রাসের বিষয়টি অনুমোদিত হলে সব মিলিয়ে দৈনিক মোট উৎপাদন হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন বা ৪৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেলে, যা বৈশ্বিক চাহিদার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও এর আগে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিল, নতুন করে উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত হবে, তেমনটা তারা আশা করছে না।

পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো কারসাজি করে তেলের দাম বাড়াচ্ছে এবং জ্বালানির দাম বাড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতির মূলে কুঠারাঘাত করছে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর যুক্তি, কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর অবাধে নোট ছাপানোর কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে এবং সে কারণে তেল উৎপাদনকারীরা মুনাফা বজায় রাখতে দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ইরাকের তেলমন্ত্রী হায়ান আবদেল গানি ভিয়েনায় পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈশ্বিক তেলের বাজারের স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় রাখতে যা করা দরকার, তা করতে আমরা দ্বিধা করব না।

এপ্রিলে হঠাৎ তেলের উৎপাদন হ্রাসের কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯ ডলারের মতো বেড়ে যায়, কিন্তু এতে বিশ্ব অর্থনীতির চাহিদা ও পরিণামে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, সেই আশঙ্কায় তেলের দাম শিগগির কমে যায়। তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের মানদণ্ড ব্রেন্ট ক্রুডের দাম গতকাল ছিল ব্যারেলপ্রতি ৭৬ ডলার।

গত সপ্তাহে সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বলেন, বিনিয়োগকারীদের তেলের দাম কেন কমছে, সে বিষয়ে নজর দেয়া উচিত।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক বলেন, ভিয়েনায় নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশা করছি।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) আশা করছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগে

বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা বাড়বে এবং তাতে তেলের দামও বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দ্রুত তেলের সরবরাহ বাড়িয়েছে, ওপেক ঠিক তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেনি।

জে পি মরগানের বিশ্লেষকরা এক নোটে বলেন, তেলের চাহিদা দ্রুত হারে বাড়ছে। কিন্তু বাজারে সরবরাহ অনেক বেশি এবং ওপেক সরবরাহ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় নিয়েছে। ওপেক বা অন্তত তার কয়েকটি সহযোগী সদস্যকে আরও বেশি পরিমাণ উৎপাদন কমাতে হতে পারে।