তেল বেচে এক বছরে ১৬১ বিলিয়ন ডলার মুনাফা আরামকোর

শেয়ার বিজ ডেস্ক : নিজেদের ইতিহাসে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে সৌদি আরামকো। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি গত বছর ১৬১ দশমিক ১ বিলিয়ন (১৬ হাজার ১১০ কোটি) ডলার মুনাফা করেছে। ২০২১ সালের তুলনায় যা ৪৬ শতাংশ বেশি। খবর: রয়টার্স।

সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল কোম্পানির এ মুনাফা এসেছে জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য, আগের তুলনায় বেশি তেল বিক্রি এবং পরিশোধিত তেলে আরও বেশি লাভ করার কারণে। আরামকোর মতো গত বছর বিপুল মুনাফা করেছে বিশ্বের অন্যান্য বড় তেল কোম্পানি, যেমন বিপি, শেল, এক্সনমোবিল ও শেভরন। তবে এক্সনমোবিলের তুলনায় তিনগুণ বেশি মুনাফা করেছে আরামকো। গত বছর এক্সনমোবিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার মুনাফা করে।

গত মাসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আরামকো বাদে বিশ্বের বড় ৬টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে মুনাফা করে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে।

মূলত ২০২২ সালে বিশ্বে তেলের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি বাড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের মধ্যে তেলের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া চীনে তেলের চাহিদা কম এবং অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কারণে এরপর তেলের দাম খানিকটা পড়ে যায়।

রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে, এ আশঙ্কায় তেলের দাম বাড়ে। ২০০৮ সালের পর ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তখন প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেল বিক্রি হয় ১৩৯ দশমিক ১৩ ডলারে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ানোর পর অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বেগ শুরু হলে তেলের দাম আবার কমে।

আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমির নাসের মুনাফার কথা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা মনে করি, তেল ও গ্যাস অনুমেয় ভবিষ্যৎ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পণ্য হিসেবে থাকবে। কিন্তু সেই তুলনায় এ খাতে খুব কম বিনিয়োগ যে ঝুঁকি তৈরি করছে, সেটি এখন বাস্তব। এ কারণে তেলের দামও বাড়ছে। ওই ঝুঁকি প্রশমিত করতে আরামকো যে শুধু তেল, গ্যাস ও কেমিক্যালসের উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগ দিচ্ছে, তা নয়, একই সঙ্গে তারা স্বল্প কার্বন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করছে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনা যায়।

২০২২ সালে আরামকোর মূলধনি ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার বা ১৮ শতাংশ। চলতি বছরে বাইরের বিনিয়োগসহ কোম্পানির খরচ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে থাকবে বলে তারা আশাবাদী।

আরামকো ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ৪ শতাংশ বেশি। কোম্পানির পর্ষদ বোনাস শেয়ার দেয়ার জন্যও সুপারিশ করেছে। অনুমোদিত হলে প্রতি ১০টি শেয়ারের জন্য একটি বোনাস শেয়ার দেয়া হবে। যোগ্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বোনাস শেয়ার ইস্যুর সুপারিশ পরিচালনা পর্ষদের।

চলতি বছরে আরামকোর অর্থ সরবরাহ বেড়ে রেকর্ড ১৪ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার।