তৈরি পোশাক রপ্তানির বাজার অনুসন্ধানে মনোযোগ বাড়ান

তৈরি পোশাক কয়েক বছর ধরে আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পোশাকশিল্পের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে বড় সাফল্য। এ খাত শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের  ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেনি, একইসঙ্গে নিশ্চিত করেছে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।

দেশের অর্থনীতিতে পোশাকশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ক্ষমতা বাড়িয়েছে এ খাত।

বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে। পোশাকশিল্পের বিকাশে নারীর ক্ষমতায়নসহ বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ছাড়াও তৈরি পোশাকশিল্পে ২৫ লাখের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এতে শ্রমজীবী নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিবারে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের কারণে এসব নারীর সামাজিক মর্যাদাও বেড়েছে।

স্বাধীনতার পর গত ৫১ বছরে পোশাকশিল্প দেশকে অনেক দিয়েছে। তৈরি পোশাকশিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং প্রভৃতি শিল্পেরও ঘটেছে সম্প্রসারণ। বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। গত বছর চার হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে, ২০৩০ সালে যা ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

পোশাক রপ্তানি বাড়াতে শিল্পমালিকদের ভূমিকাই বেশি। তারা বাজার সম্প্রসারণে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। সরকার উৎসে করসহ পোশাকশিল্প মালিকদের শুল্ক ও বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে। এটি প্রসংশনীয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে।

পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও বাজার খুঁজে বের করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজার। কিন্তু আমেরিকা ও ইউরোপে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। আমাদের সে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) হিসাবমতে, শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশের। ‘ইউএসজিবিসি’ থেকে লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৮টি। এই অর্জনগুলো বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়াতে সহায়ক হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো সারাবছর যে পরিমাণ টি-শার্ট কেনে, তার ৪০ শতাংশই বাংলাদেশি পোশাক কারখানা সরবরাহ করে। কেবল টি-শার্ট নয়, ট্রাউজার, শর্টস প্যান্ট ও পুরুষ বা শিশুদের শার্ট রপ্তানিতে ইইউতে সবার ওপরে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ডেনিম রপ্তানিতে ইইউর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও শীর্ষস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। বেশি দাম ও উচ্চপ্রযুক্তির পোশাকসহ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের কাজ করা বাকি রয়েছে। আমাদের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের সেগুলোয় মনোযোগ বাড়াতে হবে এবং রপ্তানির নতুন গন্তব্য ও বাজার অনুসন্ধান করতে হবে।