তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা

কাজী সালমা সুলতানা:

১৩ পৌষ ১৩৭৮, বৃহস্পতিবার

৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭১

এপিবি’র খবরে বলা হয়: সন্ধ্যায় বুদ্ধিজীবী নিধন তথ্যানুসন্ধান কমিটির এক প্রতিনিধিদল অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। প্রতিনিধিদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের পরিচালিত গণহত্যা সম্পর্কে তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের দাবি জানায়। এই সংস্থা ধর্মান্ধ ফ্যাসিস্ট আলবদর বাহিনী কর্তৃক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন এবং পাকবাহিনী ও কিছু বিদেশি এজেন্সিতে তাদের (আলবদর) উপদেষ্টাদের সম্পর্কেও তদন্ত চালাবে। তারা বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলে, সন্দেহজনক ফ্যাসিস্ট নরঘাতক ও তাদের দোসরদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্দেশ্যে এ কমিটিকে দ্রুত অভিযান শুরু করতে হবে।

প্রতিনিধিদল রায়েরবাজারসহ অন্যান্য স্থানে যেসব মরদেহ এখনও পড়ে আছে, সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সমাধিস্থ করার জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে আবেদন জানায়। কমিটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি তাদের দাবি সম্পর্কে ‘বাস্তব ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবেন।

নরঘাতকদের অনেকেই এখন পর্যন্ত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকাতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ওইসব রাষ্ট্রবিরোধীদের নির্মূলের ব্যাপারে কমিটির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। ঘাতকদের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণতদের জন্যও তিনি সমবেদনা ও সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন।

কলকাতায় মাদার তেরেসা এক সাক্ষাৎকারে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত কুমারী মায়েদের জন্য একটি সদন স্থাপনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। মাদার তেরেসার এ পরিকল্পনা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে। তিনি ভারতে শরণার্থী শিবিরে মাদার তেরেসার কার্যক্রম লক্ষ করেছেন। মাদার তেরেসা ভারতে নিঃস্ব লোকদের পরিচর্যায় বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য সমাজসেবার জন্য ‘ম্যাগসেসাই’ পুরস্কার লাভ করেন। গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পরিচর্যায় তিনি ভারতে একটি ধর্মীয় ‘সেবিকা সম্প্রদায়’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সমগ্র ভারতে তার সম্প্রসারণ ঘটছে। লাঞ্ছিত নারী ও অপুষ্ট শিশুর পরিচর্যায় খুব দ্রুত মাদার তেরেসা কলকাতা হতে ছয়জন সেবিকা পাঠান। তার এ কাজে সহায়তার জন্য তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা এবং তার পরিকল্পনায় সাময়িকভাবে বড় আকারের ভবন ব্যবহারে সহায়তাদানের জন্য সম্পত্তি মালিকদের প্রতি আবেদন জানান।

একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর জহির রায়হানের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে তুলে নিয়ে যায় হানাদার বাহিনী। এদিন তিনি খবর পান, শহীদুল্লাহ কায়সারকে ঢাকার মিরপুরে রাখা হয়েছে। তিনি (জহির রায়হান) ভাইকে উদ্ধারের জন্য সেখানে যান। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। বর্তমানে দিনটিকে জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস হিসেবেও পালন করা হয়।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর