Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 11:36 pm

ত্রাণ বিতরণে তদারকির অভাব কাম্য নয়

চীন থেকে উজানে ধেয়ে আসা পানির তোড়ে এবারের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ধসে ২৮ জেলায় এখন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা থাকলেও তদারকির অভাব বা অন্য কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ ও আনুষঙ্গিক সহযোগিতা ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকালের শেয়ার বিজে দুটি পৃথক প্রতিবেদনে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা-সংক্রান্ত বিপরীত চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। কার্যত, একটি অঞ্চলের গলা অবধি পানিতে আটকে থাকা রাজনৈতিক বোধশূন্য নির্মোহ মানুষের আপৎকালীন জান-মালের নিরাপত্তায় মনুষত্ব ও মানবিকতার প্রশ্নে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে সবাইকে।
এবারের বন্যায় এরই মধ্যে দুই শিশুসহ ছয় জন মারা গেয়ে। অথচ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন, ভারত ও চীনে অনেক মানুষ মারা গেলেও আমাদের কেউ মারা যায়নি। বন্যার্তদের শুকনো খাবার ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, কাউকে কষ্ট দেওয়া হবে না। কিন্তু দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি কিছু ক্ষেত্রে ত্রাণ পাওয়া-না পাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, মানুষ যেন বেশি কষ্টে না পড়ে, এ ব্যাপারে তদারকি চলছে। জাতীয় কিছু সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের বানভাষির ত্রাণ-সহযোগিতার ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে। কেবল জান বাঁচাতে যারা সবকিছু হারিয়ে পালিয়েছেন, তাদের সার্বিক আশ্রয় অপরিহার্য। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ার অভিমান ভুলে সুপেয় পানির ন্যূনতম দাবিও শোচনীয় পরিস্থিতির পরিচয় দেয়। মলমূত্র ত্যাগে মহিলাদের সংকট নিরসন জরুরি এবং যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের ফলে রোগবালাই ছড়ানোর বিষয়কে বিবেচনায় আনতে হবে। কেবল উঁচু জায়গুলোতে ত্রাণ বিতরণের ফলে নিচু ভূমিতে আটকেপড়া ও বিচ্ছিন্ন মানুষের কাছে কোনো ত্রাণ না পৌঁছানোর বিষয়টি সমাধান করতে হবে। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন রিরোধী রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ পরিস্থিতিকে আশাপ্রদ করেছে। সবার সহযোগিতায় এই মানবিক পরিবেশ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও কুচক্রী মহলের দুষ্টু চিন্তায় যেন নষ্ট না হয়। অবশ্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর যমুনায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের টেন্ডার ও নির্মাণকাজ শুরুর আশ্বাসটি জনগণের দীর্ঘদিনের বন্যা প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের আকাক্সক্ষাকে শক্তি জুগিয়েছে। ঈদ সামনে রেখে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করার বিকল্প নেই।
এখন বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা আমলে নিয়ে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া এবং ত্রাণ সহযোগিতার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বানভাসির পাশে দাঁড়াবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।