Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 11:28 pm

থানচিতে ডারিয়ার প্রাদুর্ভাব এক সপ্তাহে ৮ জনের মৃত্যু

প্রতিনিধি, বান্দরবান: বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুর্গম দশটি পাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে (৭ জুন থেকে) ডায়রিয়ায় শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত এলাকায় থানচি মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ও স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের দুর্গম অনেক পাড়ায় প্রচণ্ড গরমে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট, পাহাড়ি ঝিরি ঝর্নার দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। পাড়াগুলো হচ্ছেÑরেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ ও ৯নং ওয়ার্ডের বড়মদক, আন্ধারমানিক, নারিষ্যা পাড়া, লংঙ্যান পাড়া, মেনতাং পাড়া ইয়াংরে পাড়া, ইয়াংবং পাড়া, ঙাঁরেসা পাড়া, ম্রংগং পাড়া এবং সিং চং পাড়া। এছাড়া থানছি সদরের আশপাশের কয়েকটি এলাকায়ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ৩০ জনের অধিক রোগী ভর্তি রয়েছে।

থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক সমীরণ বড়ুয়া জানান, থানচি সদর থেকে প্রায় একশ কিলোমিটার দূরবর্তী দুর্গম আন্ধারমানিক এলাকায় ডায়রিয়া প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশুসহ ৫ রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আক্রান্ত রয়েছে আরও অনেকে।

যারা দুর্গমতার কারণে চিকিৎসা নিতে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি। তবে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুজন মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় ওষুদপত্রও নিয়ে গেছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করছে।

রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈ থুই মারমা জানান,  প্রচণ্ড গরমে এবং বৃষ্টির কারণে ঝিড়ি-ঝরনা-খালের দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে তার ইউনিয়নের দশের অধিক পাহাড়ি গ্রামে ডায়রিয়ার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। গত ৭ জুন থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি পাড়াতে শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাড়াগুলো শিশু, বৃদ্ধ আরও অনেকে আক্রান্ত রয়েছে। তবে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত নয়, কিন্তু শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে জেনেছি। বিষয়টি নিশ্চিত করে

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে মেডিকেল টিম। দশ সদস্যের মেডিকেল টিমে দুজন মেডিকেল অফিসারও রয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকা হওয়ায় পরিস্থিতি কতটা উন্নতি হয়েছে সেটি তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নতুন করে কোনো মৃত্যু খবর পায়নি মঙ্গলবার। গতকাল পর্যন্ত ইউনিয়নের আক্রান্ত কয়েকটি পাড়াতে ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য আমরা পেয়েছি।

এদিকে বান্দরবানের সিভিল সার্জন নিহার রঞ্জন নন্দি বলেন, পাহাড়ে এই মৌসুমে প্রতি বছরই দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাড়াগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট এবং বৃষ্টিতে ঝিড়ি ঝরনার দূষিত ময়লা পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। প্রথমে প্রকোপ দেখা দেয়া আলীকদম উপজেলায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।