দক্ষিণ গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জুনিয়র বিদ্যালয়ে উন্নীত করুন

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা বারো আউলিয়া গ্রামে অবস্থিত দক্ষিণ গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ত্রিমুখী সাগরবেষ্ঠিত উপকূলীয় গহিরার প্রান্তিক জনপদে অবস্থিত। যেখানে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ হয় না। দুর্যোগ ও বন্যাকবলিত এলাকা বিধায় গ্রামের আশপাশে পাঁচ মাইল এলাকাজুড়ে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় নেই। ফলে পঞ্চম শ্রেণির পর মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ বিদ্যালয়ে এতদাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার সুযোগ হয় না।

উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয় পাঁচ মাইল দূরে অবস্থিত হাই স্কুলে। দুর্যোগ কবলিত এলাকায় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও যাতায়াত সমস্যার কারণে এতদূর গিয়ে এতদাঞ্চলের ছাত্রদের পড়ালেখা করা চরম দুষ্কর। এতে অকালে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে যায় অনেকে। এমনিতে দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ২২ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ের ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ৪২ শতাংশ। ফলে ঝরে পড়ার সংখ্যার যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি শিক্ষার প্রবৃদ্ধির হার চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। গহিরা উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা এতঞ্চলের নিত্যসমস্যা।

এলাকাটি উন্নয়নে যেমন বঞ্চিত তেমনি শিক্ষা ক্ষেত্রেও অবহেলিত ও পিছিয়ে। বিধায় মৌলিক চাহিদা শিক্ষা লাভ এসব বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ অঞ্চলে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও রয়েছে প্রতিটি পরতে পরতে সমস্যা আর বাঁধা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনমতে পড়ালেখা করা যায়। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর শুরু হয় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখার চিন্তা। শীত মৌসুমে পাঁচ মাইল দূরে গিয়ে পায়ে হেটে স্কুলে যাওয়া যায়। বর্ষা ও প্রচন্ড গরমে খড়া রৌদ্রে স্কুুলে যাওয়া দুঃসাধ্য।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুযায়ি ২০১৮সালের মধ্যে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার কথা ছিল। গুটিকয়েক করে তা আর করা হয়নি। তাছাড়া যাতায়াত সমস্যার কারণে এ স্কুলের শিক্ষকরা বেশিদিন চাকরি করতে চান না। কিছুদিন করার পর তারা অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। শিক্ষাঙ্গনে যাওয়ার জন্য গাড়ি তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতো নেই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া নির্মাণ করা হয়নি পাথর দিয়ে টেকসই স্থায়ি বেড়িবাঁধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা এখানকার মানুষের জন্য নিত্য সমস্যা। পল্লি হিসেবে ইতিহাসের, সাহিত্য ও কবিতার প্রতিটি লাইনে ও চারনে পল্লির ঐতিহ্যের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। গহিরার মতো যন্ত্রণা ও বঞ্চনার পল্লি আর কোথাও খোঁজে পাওয়া দু ষ্কর। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এরকম পিছিয়ে থাকা পল্লি আর কোথাও আছে কিনা স্বচক্ষে না দেখলে বলা মুশকিল। সবকিছু বঞ্চিত করা যায়। তবে শিক্ষা কখনো বঞ্চিত করা যায়না।

প্রান্তিক জনপদের এ স্কুল হিসেবে দক্ষিন গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা প্রয়োজন। শিক্ষা উপদেষ্টা ও গণ শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, অত্র বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তরিক হবেন।

লেখক: মুহাম্মদ মনছুর
গহিরা, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম