প্রতিনিধি, শেরপুর: অটিজম ও নিউরোলজিক্যাল ডিজিসে আক্রান্ত দড়িতে বাঁধা শিশু ইতি মনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে শেরপুরের পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।
গত ১৩ জুন দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় ”শেরপুরে দড়িতে বাঁধা ইতি মনির ভবিষ্যৎ!” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ইতি মনি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় পুনাক। এ বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলা টিমকে। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি নাঈমুর রহমান তালুকদার চিকিৎসার বিষয়টি শনিবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ইতি মনিকে শেরপুর পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে আনা হয়। এসময় পুলিশ লাইন্সের বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ ইতির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে রেফার করেন। এসময় ইতিকে দীর্ঘ সময় থেরাপি দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। নিয়মিত থেরাপি, পরিচর্যা ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ইতিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও জানানো হয়েছে।
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আনিকা তাসফিয়া বলেন, গণমাধ্যমে ইতি মনির বিষয়টি প্রকাশের পর শেরপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান মহোদয় ও পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ ইতি মনির খোঁজ নিয়েছেন। শ্রীবরদী থানা পুলিশের একটি টিম ও ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার একটি টিম ইতি মনির বাড়িতে গিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরবর্তীতে পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ শিশু ইতি মনির পরিবারের সাথে কথা বলে তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদেরকে সমন্বয়ের জন্য বলেছেন।
ইতি মনি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে। জন্মের পর তিন বছর স্বাভাবিক থাকলেও পরবর্তীতে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে ইতি। এসময় সে তার নিজের শরীরে মাংস কামড়ে ক্ষত তৈরী করার পাশাপাশি পুকুর ও সড়ক ধরে হেঁটে চলে যাওয়া শুরু করতো। বেশ কয়েকবার হারিয়ে যাবার পর তাকে এখন বেঁধে রাখা হয় দড়ি দিয়ে। বর্তমানে তার শরীরের ভারসাম্য নেই বললেই চলে।
ইতির বাবা ইব্রাহিম মিয়া জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় কাজ করেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েও কোন সমাধান না পেয়ে এখন দড়িতে বেঁধে রাখা হয় তাকে। অর্থাভাবে দুই বছর ধরে তার চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক শেয়ার বিজ সহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের নজরে আসে। পরবর্তীতে পুনাকের পক্ষ থেকে ইতির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়। শেরপুরের পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ বলেন, অস্বচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব পুনাক সবসময় নেয়। একজন শিশুকে এভাবে দড়িতে বেঁধে রাখা অমানবিক। এটি আমাদের নিজেদের জন্যও কষ্টের। একজন শিশুর চিকিৎসা করাতে পারলে আমাদের নিজেদেরও তৃপ্তি লাগবে। ইতি আবারো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।