দরপত্রে উম্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিন

বাংলাদেশ সরকারের ক্রয় আইন অনুযায়ী মোট ছয় ধরনের মাধ্যমে কেনাকাটা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে উš§ুক্ত দরপত্র পদ্ধতি বা ওটিএম। উš§ুক্ত দরপত্র পদ্ধতির শর্ত হলো সেখানে একাধিক দরদাতা থাকবে। তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত দরতাদা বা ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিতে হবে। কিন্তু সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় যথাযথ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে না বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল টিআইবির ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ‘১১ বছরে একক ঠিকাদারের দরপত্রে ৬০ হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ’ শীর্ষক একটি খবর প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রতিযোগিতাহীনভাবে কার্যাদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোয়ও প্রতিযোগিতাহীনভাবে কার্যাদেশ দেয়ার নজির রয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬ ও সরকারি ক্রয়বিধি ২০০৮-এর পরিপন্থি। একক দরদাতার মাধ্যমে যে সরকারি কেনাকাটা করা যাবে না তা নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেকগুলো শর্ত পরিপালনের বিধান রয়েছে। এ ধরনের ক্রয় পদ্ধতিকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা ডিপিএম বলা হয়। কোনো কেনাকাটার ক্ষেত্রে ডিপিএম কার্যকর করতে হলে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন কোনো নির্দিষ্ট সেবা ও পণ্যের সরবরাহকারী যদি একাধিক না হয় বা সেটি যদি সহজলভ্য না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ডিপিএম করা যেতে পারে। এছাড়া সামরিক কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সাধারণ কেনাকাটায় প্রতিযোগিতাহীনভাবে কার্যাদেশ দেয়া সম্পূর্ণরূপে নিয়মের বরখেলাপ।

সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ইজিপি বা ইলেকট্রনিক ক্রয়পদ্ধতির প্রচলন করা হয়। এ পদ্ধতি প্রচলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাধাহীনভাবে উš§ুক্ত পদ্ধতিতে ঠিকাদার বাছাইকরণ এবং নাগরিকদের করের অর্থের ঋণযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এ ব্যবস্থাটিও সঠিকভাবে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে ই-জিপিতে কেনাকাটায় তদারকি কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে সদ্য গঠিত সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ। আগে যে প্রতিষ্ঠানটি সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট বা সিপিটিইউ নামে পরিচিত ছিল। এ প্রতিষ্ঠানটিই মূলত ই-জিপি প্রচলনের প্রধান কাজ পরিচালনা করে থাকে। কাজেই পিপিএ ও পিপিআর অনুসরণ করে যাতে সঠিকভাবে উপযুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনাকাটা নিশ্চিত হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্যে সদ্য গঠিত কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি সরকারি অডিট সংস্থাকেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সজাগ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।