মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আরেক দফা বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই এ দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে যে, এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। যদি তাই হয়, তাহলে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকার উৎপাদন খরচের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এভাবে দাম বাড়ানোর ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অত্যন্ত চাপের মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গৃহস্থালি পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া আবশ্যক বলে মনে করি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের রেশনিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে বৈকি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘ফের বাড়ল বাল্ক ও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গ্রাহক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিসহ সব ধরনের গ্রাহকের ক্ষেত্রে মোটামুটি পাঁচ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে আবাসিকের তুলনায় বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তবে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার পণ্য বা সেবার মূল্য বাড়িয়ে বিষয়টি পুষিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু আবাসিক পর্যায়ে বর্ধিত দাম অন্যের দিকে ঠেলে দেয়ার সুযোগ নেই। গ্রাহককেই বর্ধিত ব্যয়ভার বহন করতে হয়। এতে করে আবাসিক পর্যায়ের ধনী ও দরিদ্র উভয় শ্রেণির গ্রাহককেই একই হারে ব্যয়ভার বহন করতে হয়; যা কোনোভাবেই ন্যয়সঙ্গত নয়। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ভর্তুকিমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা উচিত।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে আবাসিক পর্যায়ে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে করে দরিদ্র্য জনগোষ্ঠী একপ্রকার বিনা খরচে বিদ্যুতের সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন। আর যারা ২০০ ইউনিটের পরে অধিকহারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন, তাদের বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে হয়। সাধারণত দরিদ্র জনগোষ্ঠী ২০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না। ফলে একপ্রকার বিনামূল্যে বিদ্যুতের সুযোগ পান ভারতের সাধারণ গ্রাহক। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশে চালু করা হলে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় এক ধরনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি কমবেশি সব দেশেই প্রচলিত। কিন্তু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় অন্যান্য খাতের ব্যয় কমিয়ে হলেও ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল সরকার। স্বাধীনতার পর থেকেই এ ধরনের ব্যবস্থা চলে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সরকার অর্থ সংকটে পড়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ গ্রহণের উদ্যোগ নেই। আর আইএমএফ সাধারণত ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকি কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু দাম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের গ্রাহকের ওপর বাড়তি দামের বোঝা সমভাবে আরোপিত হচ্ছে। এতে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ অনেক চাপে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতির চাপে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠবেন। কাজেই নিম্নআয়ের মানুষ যাতে কমমূল্যে বা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।