নিজস্ব প্রতিবেদক: ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম জাতীয় সংসদে কোরাম সংকটের কারণে ১৫২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট সময় অপচয় হয়েছে। এ অপচয় হওয়া সময়ের অর্থমূল্য ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। এর মধ্যে চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়কালের পাঁচটি অধিবেশনে কোরাম সংকটের কারণে প্রতি কার্যদিবসে অপচয় হয়েছে ৩৮ ঘণ্টা তিন মিনিট। অধিবেশন চলাকালে সংসদের ব্যয় অনুযায়ী এ সময়ের অর্থমূল্য দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা।
গতকাল ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ দশম জাতীয় সংসদ চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পদে থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গবেষণাটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার, নিহার রঞ্জন রায় ও অ্যাসিসট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার। এ সময় টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণায় বলা হয়, সংসদ বিধি অনুযায়ী অধিবেশন শুরুর জন্য অন্তত ৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়। আর এ উপস্থিতিকে বলা হয় কোরাম। সংসদের ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে অধিবেশন বসতে পারে না। আর এর ফলেই সৃষ্টি হয় কোরাম সংকট। টিআইবির প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশনে মোট ৩৮ ঘণ্টা তিন মিনিট কোরাম সংকটের কারণে অপচয় হয়। যা পাঁচ অধিবেশনে প্রকৃত সময় ২৯৮ ঘণ্টা ১১ মিনিটের শতকরা ১৩ ভাগ। অধিবেশন চলাকালে প্রতি কার্যদিবসে কোরাম সংকটের কারণে গড়ে অপচয় হয়েছে ৩০ মিনিট।
হিসাব অনুযায়ী, সংসদ পরিচালনার করতে প্রতি মিনিটে গড়ে এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা ব্যয় হয়। সে হিসাবে অধিবেশনের প্রতি কার্যদিবসে গড় কোরাম সংকটের কারণে অপচয় হওয়া সময়ের অর্থমূল্য ৪৯ লাখ ১০ হাজার ৫৮০ টাকা। আর গবেষণায় উল্লেখিত পাঁচ অধিবেশনে কোরাম সংকটেরর কারণে অপচয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা।
একইসঙ্গে এ কোরাম সংকটের কারণে দশম জাতীয় সংসদের প্রথম থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন পর্যন্ত ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা অপচয় হয়েছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংসদের কাজে সংসদ সদস্যদের অবহেলার কারণে এ অপচয় হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও সংসদে কোরাম সংকট অব্যাহত ছিল। এটা সংসদ কার্যক্রমে সংসদ সদস্যদের আগ্রহের কমতি ও ঘাটতির পরিচয়, যা খুবই উদ্বেগজনক।’
এদিকে গবেষণায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ দূত হিসাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার দায়িত্ব থাকলেও তিনি তা পালন করেননি। প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারম্যানকে (এরশাদ) ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তার এ নিয়োগের সরকারি কোনো গেজেট প্রকাশ হয়নি এবং কোনো দাফতরিক নির্দেশনাও পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, বিশেষ দূত হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল আধুনিক মুসলিমপ্রধান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রফতানির বাজার প্রসারে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করা। দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ (চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভুটান) সফর করলেও বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালনে ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় সংসদের অনিয়মিত সদস্যদের তালিকাতেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম অন্যতম বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদে তিনি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা খুব একটা না করলেও বাইরে বিশেষ করে দলীয় প্ল্যাটফর্মে কঠোর সমালোচনা করেন। এ সমালোচনা কতটুকু বাস্তব আর রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য সেটাও প্রশ্নের বিষয়। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দশম জাতীয় সংসদের মোট ১৮টি অধিবেশনের ৩২৭ কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত উপস্থিত ছিলেন ৭৯ কার্যদিবস। তার উপস্থিতি শতকরা ২৪ ভাগ। তিনি সংসদে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
