লোকাল অ্যানেসথেসিয়া বলতে আমরা বুঝি এমন পদ্ধতি, যেখানে রোগীকে পুরোপুরি অচেতন না করে শুধু নির্দিষ্ট স্থান অবশ করা হয়; যাতে চিকিৎসা চলাকালে কষ্ট বা ব্যথা না হয়। ডেন্টাল চিকিৎসায় লোকাল অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার বেশি হয়। দাঁতে ব্যথা, দাঁত তোলা, রুট ক্যানেল, ছোট-বড় অস্ত্রোপচার, ইমপ্ল্যান্ট, এমনকি ডিপ ফিলিংয়েও প্রয়োজন পড়ে বা ব্যবহূত হয় লোকাল অ্যানেসথেসিয়া। ফলে ঠিকভাবে আধুনিক চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, অসহনীয় ব্যথায় রোগীকে শান্ত রাখা যায়।
কীভাবে কাজ করে: স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা অনুভূতির সঞ্চালন হয় বলেই আমরা ব্যথা পাই। লোকাল অ্যানেসথেসিয়াটিকসে বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহূত হয়, যা স্নায়ুকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে বাধা দেয়। ফলে চিকিৎসা দেয়ার স্থান অবশ থাকে। তবে ব্যথার অনুভূতি কমে গেলেও এখানে চাপ বা স্পর্শ অনুভূত হয়, যার স্থায়িত্বকাল নির্ধারণ করে প্রয়োগ করা হয় এ ওষুধ।
কীভাবে দেওয়া যায়: সাধারণত ত্বকের ওপর স্প্রে বা জেল ফর্মে লাগানো যায়। শিশুদের নড়ে যাওয়া দুধদাঁত ফেলা, ছোট কোনো গোটা, বায়োপসি বা কোনো ইনজেকশন পুশ করার আগে এটা দেয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমে স্নায়ু অবশ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওপরের দাঁত ও নিচের সামনের দাঁতকে ইনফিলট্রেশনের মাধ্যমে অল্প স্থান অবশ করা হয়ে থাকে। তবে নিচের পেছনের দাঁতগুলোতে বা অপেক্ষাকৃত বড় অস্ত্রোপচারে স্নায়ু ব্লক করতে হয়। তখন অনেকটা জায়গাজুড়ে অবশ হয়। নিচের স্নায়ু ব্লকে রোগীর ঠোঁট ও জিবের অর্ধেকটা পর্যন্ত অবশ হয় এবং ফুলে না গেলেও ফোলা অনুভূতিসহ কিছুটা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত এক থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
সতর্কতা: চিকিৎসা শুরু করার আগে এক ঘণ্টা বিশুদ্ধ পানি ছাড়া কিছু খাওয়া উচিত নয়। ধূমপান, চা-কফি বা অ্যালকোহল পান করা যাবে না। অবশ্যই ডেন্টিস্টকে আগের যেকোনো রোগের ইতিহাস, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ, কিডনির রোগ, রক্তের রোগ, প্রেগন্যান্সি, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট বা অন্য অস্বাভাবিক অবস্থার কথা অবহিত করতে হবে। কি কি ওষুধ সেবন করেন, তা-ও জানিয়ে রাখবেন। আরামদায়ক পোশাক পরিধান করবেন ও লিপস্টিক বা অতিরিক্ত মেকআপ দেয়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসার পর পুরোপুরি অবশভাব না যাওয়া পর্যন্ত খাবার গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে।