Print Date & Time : 7 August 2025 Thursday 3:57 pm

দামুড়হুদায় হাজার বিঘা জমিতে বিষমুক্ত সবজি আবাদ

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দমুড়হুদায় এক হাজার বিঘা জমিতে নিরাপদ (বিষমুক্ত) সবজি আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা আইপিএম মডেল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে নেট বা সেক্স ফেরামন পদ্ধতির মাধ্যমে বেগুন, কুমড়ো, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করা হচ্ছে সমিতির মাধ্যমে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশবান্ধব কৌশল ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প সারাদেশে ২০টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন নির্বাচন করেছে। এতে উপজেলার এই ইউনিয়ন স্থান পায়। পরে সেখানে কৃষি অফিসের সহায়তায় ২০টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে নারী-পুরুষ মিলে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছেন। ২০টি সমিতির ৫০০ সদস্য মিলে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ১০০ একর জমিতে (বিষমুক্ত) নিরাপদ সবজি আবাদ করেছেন।

ইউনিয়নের মদনা গ্রামের কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, তিনি নেট পদ্ধতিতে ২০ শতক জমিতে বেগুন রোপণ করেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে জমির চারদিকে বাঁশের খুঁটি ও ওপরে কাবারি দিয়ে মাচা করে নাইলনের নেট দেয়া হয়েছে। এতে তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকার মতো। নেট দিয়ে ঘেরায় আলো-বাতাস যাওয়া-আসায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। ফলে নেটঘেরা বেগুনের ক্ষেতে কোনোক্রমেই পোকার আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা নেই। গাছে প্রচুর পরিমাণ বেগুন ধরেছে। এরই মধ্যে প্রথমবারে তিনি আট হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। তার এই ক্ষেতের বেগুন বিক্রি করতে হাটবাজারে যেতে হচ্ছে না। বিষমুক্ত হওয়ায় ফড়িয়ারা ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে বাজার থেকে দরও একটু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গাছে যে পরিমাণ ফুল-ফল আছে, তাতে এক সপ্তাহ পরে আরও ১০ হাজার টাকার বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হৈবতপুর গ্রামের কৃষক আশাদুল হক বলেন, তিনি ২০ শতক জমিতে পেয়ারা বাগান করেছেন। কৃষি অফিসের পরামর্শে ওই ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে কুমড়োর চারা রোপণ করেছেন তিনি। পেয়ারায় কোনো ধরনের বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াও আলোর ফাঁদ, সেক্স ফেমন, আঠালো ফাঁদ, হাতজাল ও সুষম সার ব্যবহার করা হচ্ছে পোকা দমনে। তার গাছে বিপুল পরিমাণ পেয়ারা ধরেছে। পেয়ারার আকারও বেশ ভালো। ছোট ছোট চারাগাছ থেকে এরই মধ্যে ৩০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। পেয়ারার চারাগাছ হওয়ায় তিনি একই ক্ষেতে সাথি ফসল হিসেবে কুমড়ো চাষ করেছেন। একইভাবে কুমড়োর পরিচর্যা করা হচ্ছে। এতে পেয়ারা ও একই ক্ষেতে সাথি ফসল কুমড়োর ফলন মিলিয়ে তিনি ভালো মুনাফা আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে উপজেলার সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নটি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন হিসেবে স্থান পাওয়ার পর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ২০টি সমিতি করা হয়েছে। প্রতি সমিতিতে কৃষান-কৃষানি মিলে ২৫ জন সদস্য রয়েছেন। সমিতির মোট সদস্যসংখা ৫০০। এসব সমিতির মাধ্যমে এক হাজার বিঘা জমিতে নিরাপদ (বিষমুক্ত) সবজি আবাদ করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে বিনা মূল্যে বীজ, সার, অর্থসহ পোকামাকড় দমনের যন্ত্র সহায়তা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। তেমনি উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে নিয়মিত তাদের ক্ষেত পরিদর্শন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।