নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে পাইকারি বিক্রেতারা খুচরা বিক্রেতাদের পণ্য বিক্রির সিøপ (রশিদ) দেন না বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বাজার (পাইকারি ও খুচরা) সমিতির নেতাদের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ অভিযোগ করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভার শুরুতেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘পণ্যের যৌক্তিক দাম নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা অবশ্যই লাভ করবেন। তবে সেই লাভ হতে হবে যৌক্তিক। খুচরা বিক্রেতারা কেমন দামে পণ্যে কিনছেন, তার রশিদ থাকতে হবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বাবুল বলেন, ‘কারওয়ান বাজার এখন কোনো সিøপ আমাদের দেয় না। পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ যখন কোনো মালের (পণ্য) দাম বাড়ে, তখন কোনো মার্কেট সিøপ দিতে চায় না। কৃষি মার্কেট থেকেও সিøপ দেয়া হয় না।’
জবাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সিøপ ছাড়া কোনো পণ্য বিক্রি হবে না। এটা অনেক দিন আগেই সমাধান করা হয়েছে। তাহলে আপনারা সিøপ ছাড়া নেন কেন? কোনো ব্যবসায়ী সিøপ দেন না, আপনারা সেটা আমাদের জানান। আপনি যদি সিøপ না দেখাতে পারেন, তাহলে যে পণ্য কিনছেন, সেক্ষেত্রে এটা তো স্পষ্ট যে, এখানে মেনুপুলেট (কারসাজি) করছেন। আপনারা যৌক্তিক লাভ করেন।’
অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ক্রয় ভাউচার থাকতেই হবে। ক্রয় ভাউচার না থাকা আইন অনুযায়ী বড় অপরাধ। রোজার ঈদ পর্যন্ত এক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দেব না। ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জÑএ দুটি বাজার এবং যারা বড় ব্যবসায়ী আছেন, তারা যদি ঠিক থাকেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট পাওয়ার কথা নয়।’
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘দোকানে টিসিবির পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, কেন? এটা আপনাদের (বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতা) দেখতে হবে। ঢাকায় শতাধিক মার্কেট। আমাদের পক্ষে সব দোকান পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আপনাদেরও সহায়তা করতে হবে। সব ব্যবসায়ী খারাপ নন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পরিবার আছে। তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। কিন্তু আমরা যখন গণহারে বলি সব ব্যবসায়ী খারাপ, তখন তাদের জন্য একটা বিব্রতকর অবস্থা হয়। সে কারণে আমরা আজকের এ আয়োজন করেছি। ওভার অল সুপারভিশন করা হবে। এরপরও যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটেÑকোনো ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বা বিভিন্নভাবে কারচুপি করছে, তাহলে আমরা কঠোর অবস্থানে থাকব।’
সভায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, ‘সামনে রোজার মাস। এটা একটা প্যানিক (আতঙ্ক) সময় আমাদের। যার যতটুকু লাগে, তার থেকে বেশি ক্রয় করেন এবং বাসায় মজুত করেন। যদি এক বস্তা চাল না কিনে প্রতিদিনের চালটা কিনতাম, তাহলে ব্যবসায়ীদের মজুত করার যে টাকাটা লাগত, সেটা ছাড় দিতাম।’
তিনি বলেন, ‘অভিযানে অতি-উৎসাহী ডিবির লোক যান। কিছু অতি-উৎসাহী পুলিশের লোক যান। শাহরিয়ার সাহেব জানেন, বিগত দিনে মৌলভিবাজারে কী রকম র্যাবের অভিযান চলেছে। কীভাবে হ্যান্ডকাফ পরিয়েছে। কোনো যাচাই-বাছাই নেই। দোকান খোলার আগে সকাল ৮টায় র্যাব পাঠানো হয়। রাত ১০টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যান, আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। মৌলভীবাজারে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা রয়েছে। দেখা যায়, এক পণ্যের মার্কেটে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু পুরো মৌলভীবাজার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘অভিযানের সময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সামনে শাটার নামিয়ে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছেন। আপনার যদি দুর্বলতা না থাকে, তাহলে কেন শাটার নামিয়ে দিচ্ছেন?’