দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি নিরাপদ পানি নিশ্চিত করুন

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে অন্তত ১৫ বার বাড়ানো হলো পানির দাম।

জানা গেছে, বর্তমান মূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনায় রেখে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবশ্য উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় বাড়ার যুক্তি দেখিয়ে পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর পক্ষে ছিলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

রাজধানী ও সংলগ্ন এলাকায় পানি সরবরাহ এবং পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি অধিভুক্ত এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারছে কি না, তা নগরবাসীই ভালো জানেন। তবে ওয়াসার পানিকে আগের চেয়ে ‘অনেক ভালো’ দাবি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি নিজেই ওয়াসার পানি পান করেন না। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি ট্যাপ থেকে নিয়ে খাওয়া যাবে এমন ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজধানীর বিস্তীর্ণ এলাকার পানিই নিরাপদ নয়।

আমাদের মনে আছে, ওয়াসার এমডিকে ‘সুপেয় পানির শরবত’ খাওয়াতে ওয়াসা ভবনের সামনে জগে করে ওয়াসার পানি নিয়ে এসেছেন জুরাইনের কয়েকজন বাসিন্দা। ‘ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয়’ ওয়াসা এমডি এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান তারা। তাদের বক্তব্য ছিল, ওই এলাকার ওয়াসার পানি নর্দমার পানির মতো অপরিষ্কার। এটা তো খাওয়া দূরের কথা, গন্ধে হাতে নেয়াই যায় না। এলাকার সাড়ে ৩ হাজার বাসিন্দা গণস্বাক্ষর নিয়ে ওয়াসার এমডি বরাবর অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগেও কাজ হয়নি। খাওয়ার জন্য মসজিদের টিউবওয়েলের পানি কিনতে হয় তাদের।

১৪ বছরে ১৫ বার পানির দাম বাড়ানো হয়। অথচ নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ পানি পান না নগরবাসী, এটি দুঃখজনক।

পরিবেশবান্ধব, গণমুখী ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এশিয়ার পাবলিক সেক্টরে সর্বোত্তম পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হওয়া ওয়াসার লক্ষ্য। কিন্তু নগরবাসী যে ভোগান্তির শিকার, তা নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এখন রাজধানীর প্রায় সব বস্তি বৈধ সরবরাহের আওতায় এসেছে। তাই বিল অনাদায়ী থাকার কথা নয়।

বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বড় বিপাকে আছেন সাধারণ মানুষ। যেহেতু পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েই গেছে, এখন উচিত হবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে মনোযোগ দেয়া। যাতে গ্রাহকদের খরচ আর না বাড়ে। ওয়াসার পানি নি¤œমানের হওয়ায় গ্রাহকদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করতে হয়। বেশিরভাগ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতি বছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়। পানি বিশুদ্ধ হলে এ অপচয় হতো না। অভ্যন্তরীণ সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে নিরাপদ পানি সরবরাহ সম্ভব। তাতে অপচয় ও জনদুর্ভোগ কমবে।