দারিদ্র্য ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্য, অপুষ্টিসহ সব সামাজিক অসমতা এবং একইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একযোগে কাজ করার জন্য আইপিইউ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইন্টার-পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বৈশ্বিক ক্ষুধার ক্ষেত্রেও। তবুও, বিশ্বের প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সবাইকে ঐক্যদ্ধভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।

বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে পরিত্রাণের জন্য যে সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন ফোরামে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন  প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর এক বিরাট সংখ্যক শিশু পুষ্টির অভাবে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। অসুখে-বিসুখে চিকিৎসা সুবিধাবঞ্চিত তারা। সুযোগ পাচ্ছে না বিদ্যালয়ে যাওয়ার। অথচ প্রাচুর্যে ভরা এ বিশ্বে মানবজাতির বেঁচে থাকার সব ধরনের রসদ বিদ্যমান। একটু সহানুভূতি, সহযোগিতা, পরস্পরের প্রতি মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিশ্বকে এক নিমিষেই ক্ষুধামুক্ত করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব নতুন এক উপদ্রবের মুখোমুখি হয়েছে। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জঙ্গিবাদ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সবাইকে ঐক্যদ্ধভাবে এ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে আমরা আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।

এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘সমাজের বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে সবার মর্যাদা ও মঙ্গল সাধন’। শিশুর অধিকার বিষয়ে কাজ করে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাস সত্যার্থী সম্মেলনে এ বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক এই ফোরামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর এটিই প্রথমবারের মতো বিশ্বের আইন প্রণেতাদের দীর্ঘদিনের পুরোনো এ সংগঠনের সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বের ১৩১টি দেশের ৬৫০ জন সংসদ সদস্য, ৫৩ জন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং ২০৯ জন নারী পার্লামেন্টারিয়ানসহ মোট ১ হাজার ৩৪৮ জন প্রতিনিধি এই বৃহৎ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তারা বৈষম্য নিরসন, নারীর ক্ষমতায়নে সংসদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। সম্মেলনের অন্যান্য কর্মসূচি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের ৫টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন শেষ হবে ৫ এপ্রিল বুধবার। ১৮৮৯ সালে আইপিইউ প্রতিষ্ঠিত হয়।

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুনগুংও বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মিরেসøাভ ইয়ানকা জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেজের বাণী পড়ে শোনান।

এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন, গণতন্ত্রের সফল অভিযাত্রা ও সুদূরপ্রসারি উন্নত, সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এদিন আইপিইউ ওয়েব টেলিভিশন উদ্বোধন করেন এবং দিবসটি স্মরণে ডাক টিকিট ও খাম অবমুক্ত করেন।