Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 6:08 pm

দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন বিদেশ গমনেচ্ছুরা

কাগজে-কলমে লেখা না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়াটা দালালনির্ভর। কম শিক্ষিত হওয়ায় বিদেশগামী কর্মীদের বড় অংশ মধ্যস্থতাকারীর সহায়তা নিয়ে থাকেন। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ মধ্যস্থতাকারী কিংবা প্রতিনিধিরা দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে ভিসা কেনাবেচা আর ধাপে ধাপে ‘প্রক্রিয়া খরচ’ দালালদের কারণে নির্ধারিত খরচের কয়েকগুণ খরচ করতে হয় বিদেশগামীদের। এসব বিষয় তদারকি করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেখানেও ঘুষ-বাণিজ্য রয়েছে। শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

দালালদের দৌরাত্ম্য নির্মূল, জনশক্তি রপ্তানি কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাবদিহির আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের রক্ষার উদ্দেশ্যে সব জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বৈধ প্রতিনিধির নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর সংবলিত তালিকা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) যথানিয়মে সংরক্ষণ করলে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবে।

বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন, প্রবাসীদের এমন কেউ কেউ নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে ভিসা কিনে উচ্চমূল্যে বাংলাদেশে বিক্রি করে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কয়েকবার এই ভিসা কেনাবেচা হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন হাত ঘুরে সেটি বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে আসে। এরপর প্রথমে ঢাকার এবং পরে গ্রামের দালালরা সেই ভিসা বিক্রি করে। ধাপে ধাপে এই দালালদের কারণে সরকার-নির্ধারিত টাকায় কোনো কর্মী বিদেশ যেতে পারেন না।

ভিসা কেনাবেচার পর দূতাবাসে সত্যায়ন, ছাড়পত্র, আঙুলের ছাপ দেয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশি যাচাইসহ পদে পদে ঘুষ দিতে হয়। কোন দেশে যেতে কর্মীর খরচ কোন খাতে কত, তা মুদ্রিত সাইনবোর্ড সব বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহজে দৃষ্টিগোচর হয়, এমন স্থানে লাগিয়ে রাখতে হবে। তা হলে সাধারণ মানুষ সতর্ক হবে।

কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করে সত্যতা পেলে আর্থিক জরিমানা করার নিয়ম চালু করা যেতে পারে। জরিমানার অর্থের একটি অংশ অভিযোগকারীকে দেয়ার বিধান চালু করতে হবে। ভিসা কেনাবেচা ছাড়াও দূতাবাসে ভিসা সত্যায়নের ক্ষেত্রেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামেও টাকা নেয়া হয়। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের প্রকশিত তথ্য, পার্শ্ববর্তী যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশিদের বিদেশ যেতে বেশি খরচ হয়। এর প্রধান কারণ যথাযথ তদারকির অভাব রয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসী-আয়। এক মাসে প্রবাসী-আয় আসা কমে গেলে তা নিয়ে অনেক কথা হয়। আয় বাড়ানোর জন্য সরকার প্রবাসী-আয়ে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রণোদনা হবে কম খরচে স্বস্তিকর বিদেশযাত্রা নিশ্চিত করলে। দেশে সব কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মসংস্থান করা সম্ভব নয়। প্রতি বছরই কর্মহীন তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। জমা টাকায় বিদেশ যেতে পারেন না বিদেশগামী কর্মীরা। ভিটেমাটি বিক্রি করে, ধার-দেনা করে বা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিদেশ যান তারা। তাই দালালের দৌরাত্ম্য কিংবা ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতায় বিদেশগামী কর্মীদের খরচ না বাড়ে, সে জন্য বাস্তবানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।