প্রখ্যাত ‘কল্লোল’ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশের মৃত্যুদিবস আজ। দীনেশরঞ্জন দাশের জš§ ফরিদপুর জেলার কুঁয়রপুরে ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই। বাবা কৈলাসচন্দ্র দাশ ও মা ইচ্ছাময়ী দেবী। তাদের চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে তৃতীয় ছেলে ছিলেন দীনেশরঞ্জন। তার স্কুলজীবনের শিক্ষা শুরু হয় চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু স্বদেশি আন্দোলনের প্রভাবে কলেজ ত্যাগ করেন।
কার্টুন ও ছবি আঁকার প্রতি ছিল তার ঝোঁক। কিছুদিন আর্ট স্কুলে শিল্প শিক্ষাও লাভ করেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। কলকাতার এক ফ্যান কোম্পানিতে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বিভিন্ন দোকানে কাজ করেন। কিছুকাল পর প্রকাশকের পুস্তকাদির প্রচ্ছদ ও কার্টুন অঙ্কন এবং লেখালেখি করে জীবন অতিবাহিত করেন।
এ অবস্থায় যৎসামান্য অর্থে নতুন লেখকদের নিয়ে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের নববর্ষে বন্ধু গোকুলচন্দ্র নাগের সহযোগিতায় প্রকাশ করেন ‘কল্লোল‘ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে এই পত্রিকাটি। লেখক ও পাঠক মহলে পক্ষে-বিপক্ষে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল এর মাধ্যমে। ফলে বাংলা সাহিত্যে সেই যুগ ‘কল্লোল যুগ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি ‘কল্লোল পাবলিশিং হাউস’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন লেখকের বেশ কিছু বই ছাপানো হয় এখান থেকে। বইয়ের প্রচ্ছদ সজ্জা ও কার্টুন আঁকা দুধরনের কাজই করেন দীনেশরঞ্জন দাশ।
পত্রিকা চালাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। অর্থোপার্জনের জন্য তিনি চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এরই মধ্যে চিত্র বিশেষজ্ঞ ধীরেন্দ্রনাথের অধীনে কাজের সূত্রে ফটোগ্রাফি বিষয়েও তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। ‘কল্লোল’ চালাতে গিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ায় তিনি ‘কল্লোল‘ বন্ধ করতে বাধ্য হন।
এরপর তিনি আমৃত্যু চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিউ থিয়েটার্সের অন্যতম ডিরেক্টর হিসাবে পরিচালকমণ্ডলীতে যোগদান করেন। সিনারিয়ো-লেখক ও পরিচালক এবং বিভিন্ন ছবিতে অভিনেতার ভূমিকাও গ্রহণ করেন। ‘আলোছায়া’ তারই পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র।
পত্রিকা সম্পাদনা ও অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতেও মনোযোগী ছিলেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছেÑ‘উতঙ্ক’ (রূপক নাট্য), ‘মাটির নেশা’ (গল্পসংগ্রহ), ‘ভুঁই চাঁপা (গল্পসংগ্রহ) ও ‘কাজের মানুষ’ (ব্যঙ্গ রচনা)। ১৯৪১ সালের ১২ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[সংগৃহীত]