দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা নিশ্চিতে বন্ড মার্কেট বিকাশের বিকল্প নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের ষষ্ঠ দিন গতকাল ‘দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ঘাটতি পূরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধান অতিথি এবং প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো খাতের টেকসই উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, আমাদের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সরকারি নিরলসভাবে কাজ করছে এবং জিডিপির ৪ শতাংশ এ খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে, যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলো ডিজিপির ৫ থেকে ১০ শতাংশ এজন্য বিনিয়োগ করে থাকে। এ অবস্থায় ডিসিসিআই সভাপতি অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা নিশ্চিতকল্পে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান ফজলুর রহমান বলেন, সরকার দেশের বেসরকারি খাতের বিকাশে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দানে নিরলস কাজ করছে এবং বর্তমান সরকার জ্বালানি, বিদ্যুৎ, টেলিভিশন, মোবাইল, ব্যাংকিং, ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য সুযোগ উম্মুক্ত করেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় ২২৭ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোয় তা আরও বাড়বে। অবকাঠামো খাতে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তার প্রাপ্তির জন্য আমাদের আরও কৌশলী হতে হবে বলে উপদেষ্টা মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে একটি কার্যকরী বন্ড মার্কেট চালুকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ব্যাংকগুলোয় প্রচুর অলস টাকা রয়েছে, যদি আমরা এ ধরনের অলস টাকা বন্ডে স্থানান্তরিত করতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনীতি সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. নজিবুর রহমান বলেন, সরকার আমাদের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা অবকাঠামো খাতে উল্লেখজনক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তা। তিনি ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের বেসরকারি খাতে মধ্যকার পার্টনারশিপ আরও জোরারোপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের পুঁজিবাজার এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের (পিজ) চেয়ারম্যান এন্ড্রু বেনব্রিজ বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আমরা অত্যন্ত আগ্রহী এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি। তিনি জানান, গত ২০ বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে।

গ্যারাঙ্কোর চেয়ারম্যান ইউকিকো মুরা বলেন, স্থানীয় পুঁজিবাজার উন্নয়ন, ঋণ সহায়তা প্রদান, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে গ্যারাঙ্কো কাজ করতে আগ্রহী, যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, যেটি জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করে।

গ্যারাঙ্কো এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিশান্ত কুমার বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ে সমীক্ষা করে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে এবং আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টেকনাফ সোলারটেক নামক নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

এছাড়া ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট মুহিত রহমান, মেটলাইভ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আলা আহমেদ, এফসিএ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং টেকনাফ সোলারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান প্রমুখ অংশ নেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দানে সরকারের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বন্ড চালুর জন্য পুঁজিবাজারের ওপর আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তিনি এ খাতের উন্নয়নে এককভাবে ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড চালুর মাধ্যমে ফান্ড তৈরির প্রস্তাব করেন।

টেকনাফ সোলারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূহের লতিফ খান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের দক্ষতা উন্নয়নে গ্যারাঙ্কো কাজ করছে, বিভিন্ন খাতে তাদের এ ধরনের বিনিয়োগ আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উপকৃত করছে।