Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 7:01 am

দীর্ঘ জট বিশ্বের বৃহত্তম বন্দরে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কার্গো ওঠানামার ভিত্তিতে বিশ্বে সবচেয়ে বড় বন্দর চীনের পোর্ট অব সাংহাই বা সাংহাই বন্দর। ইয়াংজি নদীর মোহনায় অবস্থিত এ বন্দরটির আয়তন তিন হাজার ৬১৯ বর্গকিলোমিটার।

এটি পরিচালনা করে সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট গ্রুপ (এসআইপিজি)। ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ জেটিতে রয়েছে ১২৫টি বার্থ (নৌযান ভিড়ানোর স্থান)। এ বন্দরে মাসে প্রায়

দুই হাজার কনটেইনার জাহাজ আসা-যাওয়া করে। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের এক-চতুর্থাংশ এ বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। কভিড সংক্রমণের কারণে এ বন্দরে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ জট। খবর: ব্ল–মবার্গ।

কভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চীন বেশ কয়েকটি শহরে আবার বিধিনিষেধ দিয়েছে। কভিডের সংক্রমণ রোধে আবার কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে এসব শহরে।

চলতি মাসের শেষে চন্দ্র নববর্ষের ছুটি সামনে রেখে বন্দরের কর্মী ও ট্রাকচালকদের কভিড পরীক্ষায় বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ

করেছে দেশটি। এসব কারণে পণ্য পরিবহন নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহের জন্য সাংহাই বন্দরে ভিড় করছেন। এতে জট হয়েছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ফ্র্রেইট ফরোয়ার্ডার ও বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সাংহাই বন্দরে ভিড়ের কারণে কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোর যাত্রার সময়সূচি প্রায় এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে। এটি এরই মধ্যে ব্যাকলগ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপে গিয়ে আরও বিলম্বের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব কারণে আর কোনো উপায় না পেয়ে পণ্যবাহী জাহাজগুলো চীনা বন্দর এড়িয়ে যাওয়া শুরু করেছে। আর চীনের শিপিং কোম্পানিগুলো নিকটবর্তী নিংবো বন্দরের ঝামেলা এড়াতে সাংহাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। অনেক জাহাজ রুট পাল্টে দক্ষিণে জিয়ামেনের দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি নিংবো কর্তৃপক্ষ বন্দরের আশপাশে কিছু ট্রাক পরিষেবা স্থগিত করেছে। এসব পরিবর্তনের ফলে বন্দরগুলোয় নতুন করে কনটেইনার জট হচ্ছে।

শেনঝেনের নাগরিক ও ট্রাকচালকদের কভিড পরীক্ষায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে বন্দরে জাহাজের দীর্ঘ লাইন হয়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি শেনঝেনের শেকু টার্মিনাল পণ্য গ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত শুক্রবার সেখানে পণ্যবাহি কনটেইনার রাখা যাচ্ছে জাহাজ পৌঁছানোর তিন দিন আগে।

চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে স্থানীয় কর্মীদের আধা-বেলা ছুটি নিয়ে কভিড পরীক্ষা করাতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল ফ্রেইট-ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান জেনকার্গোর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স হার্শাম জানিয়েছেন, তিয়ানজিন বন্দরে ট্রাক পরিষেবা স্বাভাবিক মাত্রার অর্ধেকে নেমে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দরে প্রবেশের আগে ট্রাকচালকদের প্রতিদিন কভিড পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

ওই সংক্রমণ এখন বন্দর শহর দালিয়ানেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে তিয়ানজিনফেরত দুজনের শরীরে ওমিক্রন করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে।

বন্দরের এ দীর্ঘ জটের কারণে এ প্রান্তিকে বেশ ভোগাবে চীনকেÑএমনই মনে করছেন লজিস্টিকস ইন্টেলিজেন্স ফার্ম প্রজেক্ট৪৪-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জোস ব্রাজিল। ওমিক্রনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া ও চীনা নববর্ষের ছুটি সামনে চলা আসায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে এয়ার কার্গোর অবস্থাও ক্রমে ধীরগতির হয়ে পড়েছে। গত বছর নভেম্বর থেকেই এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও কভিড-১৯ বিধিনিষেধসহ রোগে ভুগে অনেক কর্মী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ফলে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে এ খাতে। তবে ২০১৯ সালের তুলনায় নভেম্বরে এয়ার কার্গোর চাহিদা বাড়ে তিন দশমিক সাত শতাংশ বেড়েছে বলে জানায়, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। অবশ্য অক্টোবরের তুলনায় যা আট দশমিক দুই শতাংশ কম বলে জানায় আইএটিএ।

চীনে দীর্ঘ জট হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বন্দরগুলো থেকে এশিয়ায় কনটেইনার পাঠানো কমে এসেছে। এতে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সমুদ্র পরিবহন ব্যবস্থায় অস্থির সময় পার করবে চলতি বছরÑএক বিবৃতিতে বলেন কনটেইনার এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জোহানেস শিলিঙ্গার।