দীর্ঘ দুই বছর পর বন্ধ হলো তিনবোতলে ক্যানসারের চিকিৎসা কেন্দ্র

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট : তিন বোদল ঔষধ খেলে সেরে যাবে মরন ব্যাধি ক্যানসার।এর সাথে ছিলো অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি সেরে যাওয়ার বিজ্ঞাপন। গুরুগাম্ভীর্য আচরণের সাথে মহাসমারোহে এই ক্যানসার ছাড়ানোর ব্যবসাটি চলে আসছিলো,দীর্ঘ দুই বছর থেকে।জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজারে।নজর দেইনি কেউ।স্থানীয় ভাবে বিরুপ মন্তব্য আর কিছু কিছু উচ্চপদস্থের চিকিৎসা না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

হোমীওপ্যাথিক চিকিৎসক আলতাবুর রহমান বাদশা নিজেই খুলেছেন ল্যাব,গোপন তিন বোতল ঔষধের কারবার। স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের সুত্রের দাবি,প্রথম একটি অনলাইনে খবর দেখে তদন্ত দল গঠন করে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ।সেই দলের প্রধান ছিলে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আব্দুল কাদের গণি।

২০২১ সালের ৪ নভেম্বর দুপুরে উপজেলার কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে বাদশার বাড়িতে গড়ে ওঠা চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয় পরিদর্শন করেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এরপরই তার চিকিৎসা দেওয়া ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করে তারা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডাক্তার আব্দুল কাদের গনি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইনসপেক্টর তোফাজ্জল হোসেন ও ডাক্তার সাইফুল ইসলামকে নিয়ে তদন্ত কমিটি করে ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়।

তদন্ত চলে এক বছর।তদন্ত শেষে ৩০ আগস্ট বাদশার গবেষণাগারটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।এসময় ড্রাগ সুপার,স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।এসময় বাদশা মুছলেকা দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, আলতাবুর রহমান বাদশা ভুল চিকিৎসা দিয়ে অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করেছেন। তাই তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি না করে শুধু মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।

প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে তারা বলছে, সম্পূর্ণ ভুল উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন হেমিও চিকিৎসক বাদশা। এছাড়াও তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ চাইলে তিনি দিতে পারেননি। শুধু ২০০৯ সালের পল্লী চিকিৎসকের একটি কাগজ দিয়েছেন। ওই সময় তাকে ক্যানসার চিকিৎসা বন্ধ রাখতে বলা হলেও তিনি স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। এমনকি সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সাহেদ আলীর পরিবার জানায়, প্রায় ৩ মাস আগে পল্লী চিকিৎসক বাদশার কাছে চিকিৎসা নেওয়া হয়। পরে কিছু দিন ভালো থাকলেও পরে ডক্টর সাহেদ আলীর অবস্থা খারাপের দিকে যায়। উপায় না পেয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ২ মাস চিকিৎসার পর মারা যান তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে আলতাবুর রহমান বাদশার চেম্বার ও গবেষণা কার্যালয়ে যান লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়। বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা না করে বন্ধ করে দেন।

সেখানে কুমিল্লা থেকে আসা এক রোগী বলেন, এল টিভি অনলাইন নিউজ , ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দেখে একটি নম্বরে ফোন দেই। তখন তিনি বলেন, ক্যানসার রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে তিনি বলেছেন, রোগ ভালো করে দেয়ার মালিক আল্লাহ। এই কথা শোনার পর প্রায় দুই বছর চিকিৎসা নিয়েছি। আমার রোগীর কোনো উন্নতি হচ্ছে না বরং খারাপের দিকে যাচ্ছে। চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা নষ্ট করেছি। তার চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার শিকার আমি। তাই তার বিচার দাবি করছি।

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার রায় অজয় বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে তদন্ত করে বোঝা গেছে, সে ভুল চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। বাদশা মিয়ার চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু বলেন,আমরা কাগজ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নিয়েছি।তার কাছে মুছলেকা নেয়া হয়েছে।এর পরেও সে চিকিৎসা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।