দুই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা

নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : বড় পতনের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের হারানো পয়েন্টের প্রায় শতভাগ পুনরুদ্ধার করেছে। এদিন ডিএসই মূল্যসূচকে ৯৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট যোগ হয়েছে।

গত বুধবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনায় দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছিল। প্রতিবেশী দুই দেশের যুদ্ধাবস্থা নিয়ে আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীদের অহেতুক আতঙ্কের জেরে ডিএসই একদিনেই ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ফেলে। গত বুধবার সূচক চার হাজার ৮০২ পয়েন্টে নেমে আসে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল সকাল থেকেই বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। দিনের শুরু থেকেই শেয়ার লেনদেনের গতি বাড়ে এবং এই ইতিবাচক ধারা শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ৯৯ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯০২ পয়েন্টে উন্নীত হয়।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকালের লেনদেনের চিত্র আগের দিনের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ছিল। পুঁজিবাজারের অধিকাংশ কোম্পানি এবং ফান্ডের ইউনিট ও শেয়ারের দর বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৪টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৭৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল সাতটি ফান্ড ও কোম্পানির দর।

এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১২ কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল একটি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।

একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৪টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০টি ফান্ড ও কোম্পানির দরদাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর। ‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।

মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও গতকাল ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের সবগুলোর দরই বেড়েছে। অন্যদিকে করপোরেট বন্ড খাতে লেনদেন হওয়া ২টি ফান্ডের দরই বেড়েছে। সরকারি সিকিউরিটিজে গতকাল কোনো লেনদেন হয়নি।

ডিএসইতে গতকাল মোট ২১ কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৩টি শেয়ার ও ইউনিট এক লাখ ১৫ হাজার ৪৭৭ বার হাত বদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭২ টাকা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বেশ তেজিভাব দেখা গেছে। এদিন মোট ১৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে।

সিএসই সূত্রে জানা যায়, গতকাল দর বেড়েছে ১২৯টি ফান্ড ও কোম্পানির। বিপরীতে দর কমেছে ৪৫টি ফান্ড ও কোম্পানির। দিনশেষে ১৫টি কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

সিএসইতে মোট ২১ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে লেনদেন প্রায় তিন গুণের বেশি বেড়েছে; যা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।

পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের দিনের অপ্রত্যাশিত পতনের পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসায় পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একদিনের বড় পতনের পর ডিএসইর এ পুনরুদ্ধার বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বস্তির খবর এবং বাজারের স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রোববার পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে সভার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ বাড়ছে। নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা। সেই প্রত্যাশার ছাপও গতকাল বাজারকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছে।