কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল

দুই বছরে আপিল নিষ্পত্তি ৫৬৩১, মামলা জট নেই

রহমত রহমান: কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে অনিষ্পন্ন আপিল নেই বললেই চলে। গত ফেব্রুয়ারি মাস শেষে অনিষ্পন্ন আপিল রয়েছে ৮৭৫টি, আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনিষ্পন্ন আপিল ছিল ৩ হাজার ৯০২টি, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ হাজার ৫৮১টি আর ২০২০ সালে ছিল ৭ হাজার ১৫১টি। অর্থাৎ চার বছরের মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনিষ্পন্ন আপিল সংখ্যা সর্বনি¤œ। পুরোনো আপিল মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দেয়ার ফলে নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান দ্রুত আপিল নিষ্পত্তিতে জোর দেন। এই নির্দেশনা মেনে কর্মকর্তারা কাজ করায় নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ মাসে পুরোনা আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ৬৩১টি। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে পুরোনো আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ২১৬টি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর পরিশ্রমে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে, নেই মামলা জট। এই ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার পুরোনো আপিলের তথ্যে দেখা গেছে, মাসভিত্তিক হিসেবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ৬৩১টি। ২০২১ সালের জানুয়ারির শুরুতে আপিলের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৪৪৬টি, আগের বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৩ হাজার ৩৪১টি। অর্থাৎ এক বছরে পুরোনো আপিল মামলা নিষ্পত্তি হয় ২ হাজার ১০৫টি। আবার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুরোনো আপিল সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯০টি। অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পুরোনো আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৫১টি। মাসভিত্তিক হিসাব করলে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৬ মাস। এই ২৬ মাসে আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ৬৩১টি। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ২১৬টি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে।

আপিলাত ট্রাইব্যুনালের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের হয়েছে ৮৪৮টি, নিষ্পত্তি হয়েছে ৯৪২টি। ২০১৯ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ৬৯৫টি ও নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৩৯টি। ২০২০ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ৭৬৫টি ও নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৯৩টি। ২০২১ সালে মামলা দায়ের হয়েছে ৮৬৬টি ও নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৯টি। ২০২২ সালে মামলা দায়ের হয়েছে এক হাজার ৩৭১টি ও নিষ্পত্তি হয়েছে চার হাজার ৯৬৯টি। আর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ৯৩ মামলা দায়ের ও ৩৫৩টি নিষ্পত্তি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২টি মামলা দায়ের ও ৩০৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি হয়েছে।

হিসাবে আরও দেখা গেছে, চলতি বছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আপিল দায়ের হয়েছে ৯৮০টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৭৫টি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর গড়ে প্রতি মাসে ১২২টি আপিল দায়ের ও ৩৮৪টি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৮২টি আপিল দায়ের ও ৩৬৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া আগস্ট মাসে ২১১টি দায়ের ও ৩৮৮টি নিষ্পত্তি; সেপ্টেম্বরে ১৫৪টি দায়ের ও ৩৫২টি নিষ্পত্তি; অক্টোবরে ১৬০টি দায়ের ও ৩৮৪টি নিষ্পত্তি; নভেম্বরে ৭৬টি দায়ের ও ৪৭৬টি নিষ্পত্তি; ডিসেম্বরে ১১২টি দায়ের ও ৪৫৪টি নিষ্পত্তি; জানুয়ারিতে ৯৩টি দায়ের ও ৩৫৩টি নিষ্পত্তি; ফেব্রুয়ারিতে ৯২টি আপিল দায়ের ও ৩০৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে।

অপরদিকে, চার বছরের (২০২০-২০২৩) শুধু ফেব্রুয়ারির হিসাব করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা সবচেয়ে কম। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আপিল দায়ের হয়েছে ৯২টি (৪৮টি কাস্টমস, ৪৪টি ভ্যাট আপিল), নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০৪টি। আর অনিষ্পন্ন বা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ৮৭৫টি। যেখানে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আপিল দায়ের হয়েছে ৮২টি, নিষ্পত্তি ৫০১টি ও অনিষ্পন্ন ছিল ৩ হাজার ৯০২টি; ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আপিল দায়ের হয়েছে ৭৫টি, নিষ্পত্তি ২৩২টি ও অনিষ্পন্ন ছিল ৬ হাজার ৫৮১টি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আপিল দায়ের হয়েছে ৭৭টি, নিষ্পত্তি ৯৯টি ও অনিষ্পন্ন ৭ হাজার ১৫১টি।

এনবিআর সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের ৪টি বেঞ্চ গঠন করে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গ্রহণকৃত উদ্যোগে আপিল নিষ্পত্তি গতি পেয়েছে। এনবিআরের সদস্য পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সঙ্গে রয়েছেন চারজন কাস্টম কমিশনার ও চারজন জেলা জজ। এসএম হুমায়ুন কবীর (সদস্য, এনবিআর) বর্তমানে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন কমিশনার ড. মো. মতিউর রহমান। এছাড়া একজন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, তিনজন জেলা ও দায়রা জজ সদস্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও মামলা জট না থাকার বিষয়ে একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় অনিষ্পন্ন আপিল সংখ্যা কমে গেছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলেট ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তির কোনো সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল না। ফলে প্রতিনিয়ত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০১২ সালে কাস্টমসের মামলার ক্ষেত্রে ৪ বছর এবং ভ্যাটের মামলার ক্ষেত্রে ২ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এতে গতি আসে মামলা নিষ্পত্তির হারে।