দুই বন্ধুর ইচ্ছায় বাড়ছে রিজেন্ট টেক্সটাইলের দর

পলাশ শরিফ: ছয় মাসে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। আর্থিক বছরের মাঝামাঝিতে বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটির শেয়ারদরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর জের ধরে শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটির কাছে নোটিসও পাঠিয়েছে ডিএসই। তবে দর বৃদ্ধির কারণ ‘জানে না’ কোম্পানিটি।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের দায়িত্বশীলরা না জানলেও শেয়ারদরের উলম্ফনের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, ইউসিবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রভাবশালী দুই বিনিয়োগকারীর ইচ্ছায় শেয়ারদর বাড়ছে। বড় পোর্টফোলিওধারী ওই দুই ব্যক্তি বিনিয়োগকারী একে অপরের বন্ধু, তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কিনে রেখেছেন। তাই ‘দৃশ্যমান কিংবা অপ্রকাশিত’ তথ্য না থাকলেও দুই বন্ধুর ইচ্ছাতেই রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বাড়ছে। কয়েক মাস আগে কম দামে শেয়ার কিনে দর কয়েকশগুণ বাড়ানোর পর যে কোনো সময় শেয়ার বিক্রি করবেন ওই দুই বন্ধু। চলতি সপ্তাতেই তারা বেরিয়ে যেতে পারে-এমন তথ্যও মিলেছে।

অবশ্য ‘রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর বৃদ্ধির নেপথ্যের কারসাজি’ রয়েছে কি নাÑ সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি ইউসিবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। আলাপকালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মির্জা মাহমুদ রফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যমান আইন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রাখি। তাই কোনো ধরনের কারসাজির সঙ্গে জড়িত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর শেয়ার কেনা কিংবা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীর। সেখানে আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। এক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী শেয়ার বাই-সেল করি। তাই কোনো বিনিয়োগকারী যদি কারসাজি কিংবা শেয়ারদর বাড়ানোর জন্য কিছু করেÑ তাহলে সেটার দায়-দায়িত্ব সেই বিনিয়োগকারীকেই নিতে হবে।’

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ছয় মাস আগে ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর রিজেন্ট টেক্সটাইলের প্রতিটি শেয়ার ডিএসইতে ১৩ টাকা ছিল। আর গতকাল সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ ছয় মাসেই বস্ত্র খাতের এ কোম্পানির দর প্রায় ১৭৯ শতাংশ বা টাকার অঙ্কে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ থেকে গতকাল (১৬ মার্চ) পর্যন্ত ১২ কার্যদিবস ধরে রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ারদর একটানা বাড়ছে। এ সময়েই কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা। যে কারণে এর আগের সপ্তাহে ডিএসই’র দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় স্থান পেয়েছিলো রিজেন্ট টেক্সটাইল। এ সময়ে দুই কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত (হলট্রেড) ছিল। অন্যদিকে গত প্রায় এক সপ্তাহে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাতও (পিই রেশিও) প্রায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে সর্বশেষ ৩৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তাই ‘অস্বাভাবিক’ শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে গত ৯ এপ্রিল নোটিস পাঠিয়েছিলো ডিএসই, যার জবাবে ‘সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই’ বলে জানিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল।

এ বিষয়ে আলাপকালে রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোম্পানি সচিব রিয়াজুল হক শিকদার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘শেয়ারদর হঠাৎ কেন বাড়ছে কিংবা শেয়ার নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি হচ্ছে কিনাÑ সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে যে অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই, সেই বিয়য়টিও ডিএসইকে জানিয়েছি। এমনিতেও কোম্পানির শেয়ারদরের ওপর প্রভাব পড়তে পারেÑ এমন সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে ডিএসইকে জানিয়ে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। তাই এ মুহূর্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কারণ মিথ্যা তথ্য, কারো প্ররোচনা কিংবা গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’

এদিকে গত ছয়-সাত মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও রিজেন্ট টেক্সটাইলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার কিনেছেন। ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে রিজেন্ট টেক্সটাইলের ১১ কোটি ৫৫ লাখ শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে সাত দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার ছিল, যা ফেব্রুয়ারিতে দুই দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে নয় দশমিক ৯৫ শতাংশে দাঁড়ায়। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট শেয়ারের নয় দশমিক ২৮ শতাংশ বা প্রায় এক কোটি ১০ লাখ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিটির সিংহভাগ শেয়ারই (৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ) উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। তাই ওই দুই বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও রিজেন্ট টেক্সটাইলের কোনো উদ্যোক্তা-পরিচালক কোম্পানিটির সাম্প্রতিক দর বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত কিনাÑ তা খতিয়ে দেখার তাগিদ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ছয় মাসে প্রায় পাঁচ কোটি ৯১ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। আর সর্বশেষ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ ও পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল।