নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের সংকটকালে অর্থনীতির বহু সূচক নিন্মমুখী। তবে এ সংকটকালে কৃষি খাত আলোর আলো দেখাচ্ছে। একদিকে বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণ। অন্যদিকে বেড়েছে আদায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে আদায় বেড়েছে ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পাঁচ হাজার ৩০৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৫ হাজার ২৫০ আদায় হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদায় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
কয়েকজন ব্যাংকার বলছেন, কৃষকেরা কখনও ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মতো ঋণ খেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষিঋণের স্থিতি ৫৩ হাজার ২৩০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষিঋণের ঋণখেলাপির হার ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ তিন হাজার ৯২৪ কোটি।
এ দুই মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। জুলাই ও আগস্টে মোট ৮৫৩ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। ৪৮৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতির ডাচ বাংলা ব্যাংক। আলোচ্য দুই মাসে ৩৯৭ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৫৩ কোটি এবং ব্র্যাক ব্যাংক বিতরণ করেছে ২২৩ কোটি টাকার কৃষিঋণ।
দেশের ব্যাংকগুলো থেকে গত অর্থবছরে কৃষকরা ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। বিপরীতে তারা পরিশোধ করেছেন ৩৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। এর আগেও কৃষকরা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছেন। এমনকি কভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যেও কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের চেয়ে আদায় হয়েছে বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। ওই বছর কৃষকরা ২৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করেছেন।
চলতি অর্থবছরে কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক। কিন্তু এ বছর পুরো ব্যাংক খাতের জন্য কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।