Print Date & Time : 19 July 2025 Saturday 10:31 am

দুই মাস পর শুরু হলো ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে দুই মাস পর দেশজুড়ে যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ থেকে চলবে বাস। এদিকে ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশের ৪২টি রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু করেছে। যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে বসে আছেন।

গতকাল থেকে আট জোড়া ট্রেন সূচি অনুযায়ী চলাচল শুরু করেছে বলে জানান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল আলম। তিনি বলেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী অনলাইনে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে ট্রেনগুলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে।

গতকাল চালু হওয়া আট জোড়া ট্রেনের মধ্যে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের চার জোড়া ট্রেনÑবনলতা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় ও লালমনি এক্সপ্রেস রয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘যেহেতু কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, তাই অতিরিক্ত যাত্রী যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত টিকিটের বাইরে কোনো যাত্রী যাতে ট্রেনে উঠতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে স্টেশনগুলোতে।’

সকালে রাজশাহী স্টেশনে নিজে উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।’

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চার জোড়া ট্রেনÑসোনারবাংলা, সুবর্ণ, কালনী ও উদয়ন এক্সপ্রেসও গতকাল থেকে চলাচল করছে বলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়া জাহান জানান। তিনি বলেন, কয়েকটি ট্রেনের কিছু টিকিট অবিক্রীত রয়ে গেছে। তবে টিকিটের বাইরে কোনো যাত্রী যেতে পারবে না। সেজন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, পাঁচ দিন আগে অনলাইনে টিকিট কেনা যাবে। কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। ট্রেনে কোনো খাবারের ব্যবস্থা থাকছে না এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বালিশ-কাঁথা সরবরাহ করা হবে না। রেলযাত্রায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং রেলের এ বগি থেকে ও বগি চলাফেরা করা যাবে না।

বগির এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হতে হবে। যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ৬০ মিনিট আগে স্টেশনে আসতে হবে। দর্শনার্থীদের জন্য প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

এদিকে গতকাল থেকে রেলভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন; প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে জীবাণুনাশক টানেল। জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল আলম জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেলভবনে প্রবেশ করছেন।

রেল স্বাস্থ্যবিধি গাইড লাইন অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যাতে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চালানো যায়। তদারকি করা হচ্ছে। সেটা অনেকটা আমরা করতে পারছি। যাত্রীদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে, যাতে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন ভ্রমণ করেন।

গতকাল বিকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। রেলমন্ত্রী বলেন, জীবন প্রত্যেকের। সবার দায়িত্ব নিজেকে সুরক্ষায় রাখা। আমদের যদি কোনো ঘাটতি থাকে, সেটা পূরণ করব।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সরকার ১৫ দিন দেখবে গণপরিবহন চলাচলের ফল। সেটা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, রেল পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। চুল পরিমাণও কোনো ঘাটতি নেই। যাত্রীরাও নিজেদের সুরক্ষা করবেন। মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। এ সময় রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল সকালে সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশের ৪২টি রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু করেছে। যাত্রীবাহী লঞ্চের যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে বসে আছেন।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস-উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। টানা ৬৬ দিন বন্ধের পর ঝুঁকি নিয়েই আজ থেকে সীমিত আকারে চালু হয়েছে নৌপরিবহন। প্রথম দিনেই লঞ্চগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মতো কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। 

ঢাকা নদীবন্দরের নৌযান পরিদর্শক হুমায়ুন কবির জানান, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা নদীবন্দরে লঞ্চ এসেছে ছয়টি এবং বন্দর ছেড়ে গেছে ১৩টি। সকাল ১০টায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চের যাত্রীরা সামাজিক দূরত্ব না মেনে টার্মিনালের পন্টুনে ঠাসাঠাসি করে বসে আছে। এ সময় অনেকেই মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ছিল না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) কাজী ওয়াকিল নওয়াজ বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চমালিকদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের প্রবেশপথে ছয়টি জীবাণুনাশক টানেল ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জীবাণুনাশক দ্রব্য ছিটানো হচ্ছে। সীমিত পরিসরে যাত্রী বহন করা হচ্ছে।

ওয়াকিল নওয়াজ বলেন, যেসব লঞ্চ আসা-যাওয়া করবে, সেসব লঞ্চে যাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে।

অন্যদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে গণপরিবহন চালুর অনুমতি থাকলেও এক দিন পিছিয়ে আজ থেকে চালু করার সিদ্ধান্ত নেন পরিবহন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনা মানার জন্য প্রস্তুতি নিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এ তথ্য জানিয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সোমবার থেকে পরিবহন চালু করব। স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা মানার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আমরা যানবাহন নামাব।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বলেন, ‘প্রথমে ৩১ মে পরিবহন চালুর নির্দেশনা ছিল। পরে সেটি ১ জুন করা হয়েছে। আমরা সোমবার থেকে পুরোদমে স্বল্পপরিসরে পরিবহন নামাব। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে চেষ্টা করব।’