দুদকের মামলায় নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনের জেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুদকের মামলায় নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন, জাহাজমারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী কর্মকর্তা গোলাম ফারুক এবং নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাহেরা বেগম ও ছকিনা খাতুন শাহানারা।

গতকাল নোয়াখালীর স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এএনএম মোর্শেদ আলম আসামিদের ৯ বছরের জেল ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তাদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।

হাতিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৬ মে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৩৪২/৩৩২/১৮৬/৩৫৩ ধারায় ১১ নম্বর নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সচিব ছিদ্দিক আহম্মেদ জুয়েল মামলা দায়ের করেন। তফসিলভুক্ত হওয়ায় সেটি দুদকের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মশিউর রহমান তদন্ত করেন।

তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারাসহ ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭’-এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসে ১৬০ কেজি হারে ৩৮৯ জেলের জন্য মোট ৬২ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকার দরিদ্র ভিজিএফ জেলেদের চাল কম পরিমাণে বিতরণ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তদের না দিয়ে তারা ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি ও স্বাক্ষর করে দাখিল করেন। তদন্তকালে সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুসারে অর্ধেক চাল বিতরণ না করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যাতে জেলেদের ৬২ দশমিক ২৪ মেট্রিক টনের স্থানে ৩১ দশমিক ১২ মেট্রিক টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।

একইভাবে হাতিয়া উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৯ কার্ডধারী ভিজিডি সুবিধাভোগীর জন্য ২১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই বরাদ্দ থেকে ১০ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন বিতরণ না করে আত্মসাৎ করা হয়।

আসামিরা ২০১৬ সালের ১৫ মে চাল বিতরণের সময় কাউকে ১০ কেজি এবং কাউকে ২০ কেজি হারে চাল বিতরণ করে। কিন্তু প্রতিটি মাস্টার রোলে ৩০ কেজি উল্লেখ করে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি করেন। ছয়টি বরাদ্দপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেকের নামে ছয় মাসে ১৮০ কেজি চাল বরাদ্দ ছিল। আসামিরা মোট ১৫ লাখ পাঁচ হাজার ৮৮০ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছ থেকে প্রতিবার ১৬০ টাকা হারে চাঁদা নেন। তারা একে চৌকিদারি ট্যাক্স বলে উল্লেখ করলেও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের রেজুলেশনে আদায়-সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। এসব টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের রেজুলেশনে অনুমোদন না করিয়ে আত্মসাৎ করেন তারা। এছাড়া বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন খাল ও বাজার অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে ডাক দিয়ে অলিখিতভাবে ইজারা দিয়ে অর্থ আদায় করেন তারা।