দুদক কর্মকর্তা শরীফের চাকরিচ্যুতি বেআইনি: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির পর চাকরিচ্যুত করার ঘটনাকে ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতির জন্য বাংলাদেশ আজ শ্মশানে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর দুর্নীতি বের হলো এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দুর্নীতির খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো। আর এদিকে বেআইনিভাবে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরিফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশটা আজ দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারি আর মুনাফাখোরদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ও সরকারের শিল্প উপদেষ্টার ফোনালাপ ফাঁসসহ এর আগে ফাঁস হওয়া অন্য সব ফোনালাপের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে নিজেদের দলীয় অনুগত লোকদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরকার অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রথমে ‘সময় নেই’ বলেও পরে তাড়াহুড়ো করে সাত দিনের মধ্যে একটি আইন করেছে। বস্তুত এটা নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নয়, এটা সার্চ কমিটি গঠন আইন।

তিনি বলেন, যাদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা সার্চ করে নতুন কমিশনারদের নিয়ে আসবেন, তারা তো নিজেরাই নিরপেক্ষ নন। বরং এটাকে জায়েজ করার জন্য সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের ডাকা হয়েছে। তাদের ৬০ জনের বেশি বক্তব্য দিয়েছেন, কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতিও তাদের সংলাপে ডেকেছিলেন, সেখানেও তারা কথা বলেছেন।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও আমলাতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে, গণমাধ্যমকেও করেছে কুক্ষিগত।

‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুসারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গত ৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সার্চ কমিটির প্রধান (বিচারপতি ওবায়দুল হাসান) নিজেই দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার বাবা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। ছোট ভাই ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব। তাহলে এখানে নিরপেক্ষতা থাকল কোথায়?

বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘রাজনৈতিক সংকট’ বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল এ সংকট উত্তরণে জনগণকে রাজপথে নামার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংবাদিক নেতা রাশেদুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।