নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (বিআরটি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম বলেছেন, গার্ডার পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একটু চেপে ধরা হয়েছে। ঘটনার পর আমরা তাদের একটু চেপে ধরেছি। তারাও কাজের কিছুটা অগ্রগতি ঘটাচ্ছেন। আশা করছি, চাপটা যদি অব্যাহত রাখতে পারি, সেক্ষেত্রে হয়তো কাজের গতি দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিকদের সফিকুল ইসলাম এ কথা বলেন। এর আগে সকালে রাজধানীর
বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে বিআরটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে বিআরটি করিডোর পরিদর্শন করে গাজীপুর চৌরাস্তায় যাওয়া হয়।
নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই একটি প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ কীভাবে করা হয়েছেÑগণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাবা যাক আর না যাক, কাজ হয়ে গেছে। যদি এই ঘাটতি না থাকত, তাহলে কোনো কোনো জায়গায় আমাদের কাজ শতভাগ শেষ হয়ে যেত। কাজের ঘাটতির জন্য আমরা পিছিয়ে রয়েছি।’
সাড়ে ২০ কিলোমিটার দূরত্বের বিআরটি প্রকল্পের কাজ সার্বিকভাবে ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানান সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মূল যে কাজ, সেই পূর্ত কাজ করছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৬ কিলোমিটারের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের গেজুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি)। এদের অগ্রগতি ৮২ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধীনে বিআরটির সাড়ে চার কিলোমিটারের উড়াল অংশের ঠিকাদারি পান চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান জিয়াংশু প্রভিন্সিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড। তাদের অগ্রগতি ৭২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
কখনোই ঠিকাদারের কর্মক্ষমতা শতভাগ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে পরিমাণ কাজ বাকি রয়েছে, ঠিকাদার ও পরামর্শকদের যে সামর্থ্য, তাতে যদি ঠিকাদারকে শতভাগ কাজ করাতে পারি, তাহলে যে সময় বাকি রয়েছে তা যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দুর্ঘটনার আগে ঠিকাদারদের আর্থিক অসংগতি ছিল। কখনোই তাদের কাছে আমরা শতভাগ পারফরম্যান্স পাইনি।’
দুর্ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে বিআরটি কর্তৃপক্ষ খুব ‘সিরিয়াস’ বলে জানিয়ে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি আর দুর্ঘটনা ঘটবে না। একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের পর্যায় পর্যন্ত আমরা সবাই এখন খুব সিরিয়াস। ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদল চীন থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। তারা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
ঠিকাদারের কাছে বিআরটি কর্তৃপক্ষের তিনটি চাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারের তহবিলের ঘাটতি আর লোকবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। নিরাপত্তা কর্মকর্তার ঘাটতি পূরণ করে শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তারা সব বিষয়ে একমত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে বিআরটির সব কাজ স্থগিত রয়েছে। যেসব পয়েন্টে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, সেখানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অনুমতি দিলে আবার কাজ শুরু হবে। এর জন্য ১০ বা ১৫ দিন লাগুক, কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’
যাদের তদারকির দায়িত্ব ছিল, তারা কী করলেন এত বছরÑএমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ওই প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কথা অফিশিয়ালি বলতে পারব না। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, শুধু ঠিকাদারের ওপর দোষ চাপালে হবে না। তাদের দায় অবশ্যই থাকে। কিন্তু মূল দায় ঠিকাদারেরই। ঠিকাদারকে বারবার আমরা সতর্ক করেছি, চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আমরা কিছু সমস্যার মধ্যে থাকি। তাদের সঙ্গে কিছু সমঝোতা আমাদের করতে হচ্ছে কাজের স্বার্থে।’
ঠিকাদার ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দিলেও ছোট কাজগুলোর জন্য আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। আর বাস চলাচল আগামী বছরের জুনে শুরু হতে পারে বলেও জানান তিনি।
পরিদর্শনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার একেএম মনির হোসেন পাঠান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিএমসিসিবির আন্তর্জাতিক টিম লিডার মাহাবুবুল বারীসহ বিআরটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা এ সময় সড়ক ও জনপথের বিমানবন্দর ও জসীমউদ্?দীন অংশের উড়ালসড়ক, সেতু কর্তৃপক্ষের উত্তরা হাউস বিল্ডিং থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত উড়ালসড়ক, তারগাছ এলাকায় সওজের অংশের সমতলের বিআরটির স্টেশন এবং গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় স্টেশন ও উড়ালসড়ক পরিদর্শন করেন।
গত ১৫ আগস্ট এক বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে বর-কনে ও তাদের স্বজনেরা প্রাইভেট কারে করে ঢাকার কাওলা থেকে আশুলিয়ার বাসায় ফিরছিলেন। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে তাদের প্রাইভেট কারের ওপর বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন দিয়ে তোলা গার্ডার পড়ে যায়। এতে দুজন গাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তবে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পরে গাড়ির ওপর থেকে গার্ডার সরিয়ে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা সারাদেশের মানুষকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। এর পর থেকে আপাতত নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ স্থগিত রয়েছে।