দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে রেলের ডিজি করার পাঁয়তারা!

ইসমাইল আলী: বাংলাদেশ রেলওয়েতে বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। ১১ ডিসেম্বর তার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই রেলে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে চলছে তোড়জোড়। যোগ্য না হলেও এক্ষেত্রে বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে ডিজি করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করার চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, মহাপরিচালক পদের জন্য দ্বিতীয় গ্রেডের যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছে রেলে। তা সত্ত্বেও তৃতীয় গ্রেডের এক কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করার চেষ্টা চলায় রেলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি রেলপথ মন্ত্রণালয়কে দুটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ডিও (আধাসরকারিপত্র) দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়েতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পদে চলতি দায়িত্বে কর্মরত আছেন মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। গত বছর জুন ও সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। চিঠি দুটির অনুলিপি (স্মারক নং- ০০.০১.০০০০.১০৩.০৬.০০১.২২.৪৮৪ তাং ০৬/০৬/২০২২) ও (স্মারক নং- ০০.০১.০০০০.৪০৩.০১.০৩৭.১৯ ২২৯৫৫ তাং- ২০/০৯/২০২১) শেয়ার বিজের হাতে এসেছে। জুনে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তনাধীন রয়েছে। ওই চিঠিতে রেলের আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি তদন্তের কথা জানানো হয়।

এদিকে সেপ্টেম্বরে ইস্যুকৃত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী দল রেলের কর্মরত ও অবসরে যাওয়া ৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানায়, যার মধ্যে ছিলেন মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী। উল্লিখিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ ও রেকর্ডপত্র ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সরবরাহে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

যদিও এসব বিষয় গোপন করে মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীকে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দিতে গত মাসে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে ডিও দেন রেলপথমন্ত্রী। এতে মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে গতকাল রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, এখনও দ্বিতীয় গ্রেড না পাওয়ায় মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীকে সরাসরি রেলের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব না। তাই আপাতত তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক করা হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় গ্রেড প্রাপ্তিসাপেক্ষে তাকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হবে। যদিও বর্তমানে রেলওয়েতে দ্বিতীয় গ্রেডের একাধিক কর্মকর্তা কমরত রয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ডিও লেটারে অতিরিক্ত মহাপরিচালককে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাল্যবন্ধুর জামাতা বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া এই কর্মকর্তার শ্বশুর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন এবং ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক জতীয় নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হয়েছেন বলেও জানান রেলপথমন্ত্রী। এসব পরিচয় থাকা সত্ত্বেও ওই কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় গ্রেডে অদৃশ্য কারণে পদোন্নতি দেয়া হয়নি, যা তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে রেলভবনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব দেয়া রেলের উন্নতির পথে অন্তরায়। তার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের সরবরাহকৃত নি¤œমানের ১০ ইঞ্জিন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল রেলওয়ে। ওই প্রকল্পের অনিয়ম নিয়েও তদন্ত করছে দুদক। এ অবস্থায় কীভাবে রেলপথমন্ত্রী তাকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেনÑতা বিস্ময়কর।