দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স দেখানো হোক

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছেন, দুর্নীতি দেশের ২ থেকে ৩ শতাংশ জিডিপি খেয়ে ফেলছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিকে উন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশের দুদক ও ভুটানের দুর্নীতি দমন কমিশনের মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান এসব তথ্য জানান। দেশ দুটি আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে দুর্নীতিবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদান ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্র্রসারিত করবে।

দুর্নীতি যে দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায়, তা সবার জানা। তবে সুস্পষ্টভাবে কত শতাংশ জিডিপি এতে আক্রান্ত, তা জানা গেল দুদক চেয়ারম্যানের ভাষ্যে। একটি নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি করছে। দৃশ্যমান হচ্ছে উন্নয়নের অনেক কর্মকাণ্ড। এসব বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোথায় কতটুকু দুর্নীতি হচ্ছে, সেসব তথ্য নিশ্চয়ই দুদকের কাছে রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় জীবনে প্রতিটি সেক্টরেই যে দুর্নীতি জেঁকে বসেছে, তাও অস্বীকারের উপায় নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমরা একেবারে উপরের দিকেই রয়েছি। যে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের দুদক চুক্তি করেছে, তারা কিন্তু এসব বিষয়ে সচেতন। দুর্নীতি সেখানে আমাদের মতো জেঁকে বসেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক রয়েছেÑএ স্বীকার করেও বলা যায়, দুর্নীতির প্রকোপ কমাতে আমরা কি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি নাকি দুর্নীতিকে আমাদের কর্ম-সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছি?

দেশের ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই দুদক চেয়ারম্যানের জানা। দুদকের কাছে অনেক তথ্য থাকলেও তারা কি সেগুলো মোকাবিলায় যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করতে সক্ষম? এদেশে যদিও ছোট পর্যায় থেকে দুর্নীতি হয়, কিন্তু যারা বড় বড় দুর্নীতি করেন, তাদের কি দুদক শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে পারছে? এসব প্রশ্নের উত্তর বের করা জরুরি। ঘুষকে এখন ‘স্পিড মানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দুর্নীতিকে এভাবেই নৈতিক সমর্থন দেওয়া হয়ে থাকে দায়িত্ববান ব্যক্তিদের কাছ থেকে। প্রতিবছর কালোটাকা সাদা করারও সুযোগ দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আগে একে ‘রাজনীতির কাছে নৈতিকতার পরাজয়’ হিসেবে স্বীকারও করেছেন। এতেই বোঝা যায়, এদেশে দুর্নীতিবাজরা কতটা শক্তিশালী বা তাদের শেকড় কত গভীরে প্রোথিত, যে দেশের অর্থমন্ত্রীকেও এসব বিষয়ে নতি স্বীকার করতে হয়। দুদক চেয়ারম্যানেরও এসব বিষয় ভালোভাবে জানা থাকার কথা।

আমরা মনে করি, সাংবিধানিক ও আইনি কাঠামোর মধ্য থেকে দুদককেই উদ্যোগী হতে হবে দুর্নীতি কমানোর জন্য। দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা অসম্ভবই বটে, কিন্তু এর ব্যাপ্তি ও পরিসর কমিয়ে আনা সম্ভব। কোথায় কোথায় বড় আকারের দুর্নীতি বেশি হয়, সেগুলো তো দুদকের জানা। আপাতত সেসব সেক্টর ও কর্মকাণ্ডে আর্থিক বিষয়াদি জোরালোভাবে মনিটর করা হোক। এভাবেই ধীরে ধীরে দুর্নীতি দমনে জিরো টলারেন্স দেখানো হোক।