দুর্বল বিমানের খেলাপি ঋণ কি ব্যাংকের দায়?

 

২০০৮ সালে আটটি উড়োজাহাজ কেনার উদ্দেশ্যে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশ সরকার। এ চুক্তি পরিপূর্ণ হওয়ার মেয়াদসীমা ২০২০ সাল। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে বোয়িংয়ের আটটি উড়োজাহাজই থাকবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের হাতে। এর মধ্যে ২০১১ সালের অক্টোবর দেশে পৌঁছে ‘পালকি’ ও ‘অরুণ আলো’ নামে দুটি বোয়িং। দ্বিতীয় দফায় ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ূরপঙ্খী’ নামে ৭৩৭-৮০০ মডেলের আরও দুটি বোয়িং এসে পৌঁছায় ২০১৫ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। অনেক পাঠকেরই তা মনে থাকার কথা। কেননা এ চারটি সুন্দর নামধারী বোয়িং দেশে আসামাত্র ইতিবাচকভাবে খবর হয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমে। অনেকেই সেগুলোর মাঝে দেখতে পেয়েছিলেন বিমানের সুদিন আসার আলো। কথা হলো, ওই দুই বোয়িং কেনার লক্ষ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার তথা ৪২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সোনালী ব্যাংক ইউকে থেকে; উদ্দেশ্য ছিল উড়োজাহাজ দুটির প্রি-ডেলিভারি পেমেন্ট (পিডিপি) পরিশোধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ গৃহীত হয়েছিল ঋণটি। কথা ছিল, দুই বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করবে বিমান। সেটি করতে পারেনি তারা। বর্ধিত সময়েও আলোচ্য ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি বিমান। এখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পুনরায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনমনীয় ঋণ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি সময়সীমাটি আরও ছয় মাস বাড়িয়েছে বলে খবর রয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘নতুন দুটি বোয়িং ক্রয়: সোনালী ব্যাংক ইউকের ঋণ শোধ করছে না বিমান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রবাসীদের সেবা জোগাতে ও ঋণপত্রের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটেনে যাত্রা করে সোনালী ব্যাংক, যা সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড নামে পরিচিত।

প্রথম কথা হলো, বিমান যে বর্ধিত সময়ের মধ্যে ঋণটি পরিশোধ করতে পারবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, তাহলে কী করণীয় ঋণ অবলোপন না পুনর্গঠন? এখানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মতো একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠানের নামে কেন ওই পরিমাণ ঋণ ছাড় করা হলো, সে তর্ক তুলে লাভ নেই। ঋণটি অনুমোদন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। ফলে এখানে সোনালী ব্যাংকের অতীত কেলেঙ্কারি উত্থাপন অপ্রাসঙ্গিক। যারা ঋণটির অনুমোদন দিয়েছিলেন, তাদেরও নিশ্চয় প্রাক্কলন ছিল ওই ঋণ পরিশোধে কী পরিমাণ সময় লাগতে পারে বিমানের। সংস্থাটি যে আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি, তা বলাই বাহুল্য। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন, বিমানকে চাঙা করতে ভর্তুকির পরিমাণ আর কত বাড়াবে সরকার? এরই মধ্যে সংস্থাটির পেছনে যে ব্যয় হয়েছে, তার রিটার্ন প্রত্যাশা করা বৃথা বলেও মনে করেন তারা। উল্টো তাদের শঙ্কা, ওই ভর্তুকি আরও বাড়ানো হবে কি না এবং হলে কীভাবে ও কোন পর্যন্ত। লক্ষ করা দরকার, লোকসানে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিমানকে শক্তিশালীকরণের কম উদ্যোগ নেয়নি সরকার। অথচ কোনোভাবেই যেন বিমানকে লাভে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। এদিকে বিমানের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে বিমানবন্দরের পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কিছুটা গাফিলতি হয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী এ সংস্থাটির সেবা নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও। তার পরও বিমানকে অব্যাহতভাবে বৃহৎ ঋণ জুগিয়ে চলা হবে কি না, সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে চলমান ঋণ যেন মন্দ ঋণে পরিণত না হয় এবং সেগুলোর দায় ব্যাংকের ওপর না বর্তায়, সে বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।