বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত

দুর্বল বিমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে কঠোর বীউনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্বল ব্যাংকের মতো দেশের দুর্বল বিমা কোম্পানিগুলোর গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ‘বিমা রেজল্যুশন’ অধ্যাদেশ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক)। এরই মধ্যে এ বিষয়ে রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সংস্থাটি। ‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ কার্যকর হলে দেশে ব্যবসারত দুর্বল ও ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে থাকা বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, কোম্পানি অধিগ্রহণ, প্রশাসক নিয়োগ, অন্য কোম্পানির সঙ্গে একীভূতকারণ, কোম্পানির শেয়ার বিক্রি ও অবসায়নের উদ্যোগ নিতে পারবে বীউনিক। এতে বিমা কোম্পানির গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীউনিক।

দায়িত্বশীলরা বলছেন, রেজল্যুশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুর্বল ও পিছিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এক বা একাধিক ‘ব্রিজ বিমা কোম্পানি’ গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই ব্রিজ কোম্পানি সংকটে পড়া বিমা কোম্পানিগুলোকে সাময়িক সময়ের জন্য পরিচালনা করবে। ব্রিজ কোম্পানির মেয়াদ হবে দুই থেকে পাঁচ বছর। ব্রিজ কোম্পানি পরিচালনার জন্য অধ্যাদেশ মেনে পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দেয়া হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থার সহযোগিতায় প্রয়োজনে তহবিল গঠন করা হবে। একই ভাবে বিমা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ সুরক্ষা তহবিল গঠন করা হবে। কোনো কোম্পানি অবসায়ন বা একীভূতকরণের সময় সেই অর্থ ব্যবহার করা হবে। এ অধ্যাদেশের মূল লক্ষ্য বিমা গ্রাহক যেন তার দাবি যথাসময়ে পায় ও সংকটে থাকা কোম্পানিগুলো যেন দ্রুত দাবি পরিশোধ করতে পারে, তা নিশ্চিত করা।

বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীউনিকের মুখপাত্র এবং গণমাধ্যম ও যোগাযোগ পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি শেয়ার বিজকে বলেন, খসড়া অধ্যাদেশের মূল লক্ষ্য হলো বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিমা দাবির পরিশোধ নিশ্চিত করা। যেসব বিমা কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে দুর্বল ও বিমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থ তাদের বিষয়ে বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ এ ধরনের কোম্পানি বিমা খাতে অস্থিরতা তৈরি করছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো বিমা খাতের ওপর। নিরীক্ষা শেষ হলে প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে কারণেই ব্যাংক খাতের ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের’ মতো এ অধ্যাদেশও দুর্বল বিমা কোম্পানি ও গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় সহায়ক হবে।

বীউনিকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে ‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ শিরোনামে একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বীউনিক। শিগগিরই খাতসংশ্লিষ্টদের মতাতমতের জন্য বীউনিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতেই বহুল প্রত্যাশিত এ অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এই অধ্যাদেশের খসড়া অনেকটাই ব্যাংক রেজল্যুশনের আদলে করা। তবে এই অধ্যাদেশে শুধু বিমা কোম্পানির গ্রাহক নয়, বিমা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারী ও পাওনাদারদের স্বার্থরক্ষার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। তাই এ অধ্যাদেশকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ব্যবসারত ৩২টি জীবন বিমা কোম্পানিতে প্রায় ১১ লাখ গ্রাহকের চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আটকে আছে। এসব কোম্পানির মধ্যে সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, সানলাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ ও এনআরবি ইসলামিক লাইফের মতো ১৫টি কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে রয়েছে। কোম্পানিগুলো বিমা কোম্পানির গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। ২০২৪ সাল শেষে এ কোম্পানিগুলোর কাছে এই কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের বকেয়া বিমা দাবি প্রায় তিন হাজার ৯৮০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। আর এ কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই এ ১৫টি কোম্পানিকে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে বীউনিক।

অধ্যাদেশ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হলে বীউনিক দুর্বল কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। সেই কোম্পানির শেয়ার ধারণকারী থেকে শুরু করে বিমা গ্রাহক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, শেয়ার বিক্রি, প্রশাসক নিয়োগ ও অধিগ্রহণ-একীভূতকরণের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এ সংস্থার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পৃথক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করবে বীউনিক। এজন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে।