দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে আফগানিস্তান সহায়তা করবে কি যুক্তরাষ্ট্র?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: গত আগস্টে আফগানিস্তানের মসনদে বসে তালেবান। দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বিদেশে থাকা দেশটির কয়েক বিলিয়ন অর্থ জব্দ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ কর্মকাণ্ডে শামিল হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ সম্পত্তি ফ্রিজ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

অনেক আফগানের মতো সিবঘাতুল্লাহ আহমাদিও দীর্ঘ দুই দশকের যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় খুশি হয়েছিলেন। চলতি বছর এক যুদ্ধে তার গ্রাম কাপিসা বিধ্বস্ত হয়। এর চার মাস পর তালেবান ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্র দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আনন্দে উদ্বেল হন তিনি।

কিন্তু কয়েক দিন না পেরোতে সে আনন্দে ছেদ পড়ে। ২৫ বছর বয়সী বেকার সিবঘাতুল্লাহ কাজের সন্ধানে এখন দুই বছর বয়সী সন্তান ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ইরানে পাড়ি জমাতে চাচ্ছেন। সেখানে আবাসন খাতে চাকরি করার ইচ্ছা রয়েছে তার। তার সমবয়সী অনেকে এরই মধ্যে দুর্গম ও বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাই তিনি বলেন, ‘আমাকে যেতেই হবে। দেশ ছাড়তেই হবে। আর কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের অর্থ নেই।’

তহবিলের অভাবে ভেঙে পড়েছে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ফলে দেশটিতে মানবিক বিপর্যয়ের পরিণতি নিয়ে সতর্ক করে আসছে ত্রাণ সহায়তা গোষ্ঠীগুলো। ক্রমবর্ধমান সংকট উত্তরণে আফগানিস্তানের জব্দ অর্থ ছাড়ের বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছে মুসলিম দেশগুলো। গত রোববার পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওআইসির বৈঠকে আফগান ইস্যুতে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অর্থছাড়ের পাশাপাশি সহায়তা না করলে এবারের শীতে দেশটির মানবিক পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছানের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পশ্চিমা দেশগুলো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি এখনও। তাই যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ আফগানিস্তানের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার (এক হাজার কোটি ডলার) রিজার্ভ জব্দ রেখেছে। বিশ্বব্যংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও দেশটিতে অর্থ দেয়া স্থগিত রেখেছে। জব্দ অর্থ আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে।

আফগানিস্তানের লাখো মানুষ যারা সশস্ত্র বাহিনী, সরকারি চাকরি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি খাতে কাজ করছেন, তারা কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।

তাই জব্দ অর্থ ছাড়ের দাবিতে উত্তাল হয়েছে কাবুল। আমাদের খেতে দাও, আমাদের জব্দ অর্থ ছাড় দাও এমন স্লোগানে মুখর রাজধানী কাবুল। সম্প্রতি এভাবে বিক্ষোভ করেন হাজারো আফগান। কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের দিকে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। তবে দূতাবাসটি বন্ধ রয়েছে।

চলতি সপ্তাহে জনসাধারণের বিক্ষোভে তালেবান বাহিনী সহায়তা করে। তাদের নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই কাবুলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের উদ্দেশে মিছিল বের করে ক্ষুব্ধ জনতা। এতে প্রধান সড়কে কিছুক্ষণের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল নানা ধরনের লেখাসংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। বিক্ষোভে নানা পেশাজীবী মানুষ অংশ নেয়।

এরই মধ্যে এশিয়ার দরিদ্রতম দেশে পরিণত হয়েছে আফগানিস্তান। এখন অনেক আফগানের কাছে খাবার সংকুলান করার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ধারণা করছে, দেশটির প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটে রয়েছেন। সবমিলে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে আফগানিস্তান।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান আবদাল্লাহ আল-দারদারি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো খাতে ধস নামছে। ব্যাংক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের পাশাপাশি পানি, পয়োনিষ্কাশন প্রভৃতি একের পর ধসে পড়ছে।

দেশটি তাই জব্দ করা অর্থ ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি সহায়তা চেয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, আমাদের অর্থ ফেরত দাও। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাধারণ আফগানদের জিম্মি করে নিজের রাজনৈতিক ব্যর্থতা লুকাতে চাচ্ছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ২০ কোটি আট লাখ ডলার সহায়তা করেছে, যা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। পশ্চিমা দেশগুলোর এক মুখপাত্র বলেন, আফগানিস্তান দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আফগানিস্তান।

সব বিতর্ক ছাপিয়ে আফগানিস্তানে এখন খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য জব্দ অর্থ ছাড়কে প্রাধান্য দেয়া উচিত। বিদেশি সহায়তা ছাড়া দেশটি কতদিন টিকে থাকতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে মহাবিপর্যয় নেমে আসতে পারে, যা সবার জন্য ক্ষতিকর হবে।