Print Date & Time : 6 September 2025 Saturday 12:04 am

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতেই ব্যয় ৭৩ শতাংশ

রোহান রাজিব: ব্যাংকের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় বেড়েছে। তবে স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান খাতে ব্যয় কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে এ সিএসআর খাতে ব্যয় হয়েছে ৬২৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৯৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আলোচ্য ছয় মাসে সিএসআর খাতে ব্যয় বেড়েছে ৩৩১ কোটি টাকা বা ১১১.৩৫ শতাংশ।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআর কার্যক্রমের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি ছয় মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন-এ ছয় মাসে সিএসআর খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলায়। এর মধ্যে ব্যাংক এ খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। কারণ সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা হয়। তাই তাদের মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ৪৬১.৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়; যা মোট সিএসআর ব্যয়ের ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এরপর শিক্ষায় ৮০.০১ কোটি বা ১২.৭১ শতাংশ, স্থাস্থ্য খাতে ৫০.০২ কোটি বা ৭.৯৫ শতাংশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে ১৩.৬৬ কোটি বা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু ১১.০৯ কোটি বা ১.৭৬ শতাংশ, আয় উৎসারীতে দশমিক ২৭ শতাংশ, অবকাঠমোতে দশমিক ২২ শতাংশ ও অন্যান্য খাতে ১.৫৯ শতাংশ ব্যয় করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় চলতি বছরের (জানুয়ারি-জুন) সময়ে শিক্ষা খাতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের পরিমাণ পূর্ববর্তী ছয় মাসের তুলনায় উল্লেখ্যযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় চলতি বছরের (জানুয়ারি-জুন) সময়ে ২০২১ সালের (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় প্রায় ৩.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের সিএসআর ব্যয় হয়েছে বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মিলে নয় কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। বেসরকারি ব্যাংক মিলে ৬০৯ কোটি ৮৫ লাখ বা ৯৬.৯০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংক মিলে ৯.৫৭ কোটি টাকা বা ১.৫২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, সিটিজেনস ব্যাংক লিমিটেড, কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শেয়ার বিজকে বলেন, কভিডের সময় অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে ব্যাংকগুলো এ খাতে ব্যয় কমিয়েছে। তবে কভিড পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর আবার ব্যাংক এ খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। তাই বলা যায়, আগের ছয় মাসের তুলনায় এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। আর যেসব ব্যাংক ব্যয় করেনি, তাদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে সিএসআর খাতে মোট ৬৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো করেছে ৬২৯ কোটি টাকা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো করেছে ৪ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যাংকগুলো এ খাতে ব্যয় করেছিল ২৯৭ কোটি টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় করেছিল ৩ কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ব্যয় জুলাই-ডিসেম্বর ২০২১ তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে আলোচ্য সময়ে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে এ ছয় মাসে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। তবে উভয় সময়ে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আয় উৎসারী খাতে কোনো সিএসআর খাতে ব্যয় করা হয়নি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআর ব্যয়ের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট এবং খাতওয়ারি ব্যয় ব্যাংকগুলোর মোট এবং খাতওয়ারি ব্যয়ের তুলনায় অত্যন্ত কম।