Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 1:29 am

দূষণে তুলাসার বাঁওড়ে কমেছে অতিথি পাখির সংখ্য

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শীতের মৌসুমে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে শরীয়তপুরের তুলাসার বাঁওড়ে ২৫ প্রজাতির হাজারো পরিযায়ী অতিথি পাখি দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে আসছে। পরিযায়ী এসব পাখির কলরবের সুধা ও সৌন্দর্যে বিমোহিত হয় দর্শনার্থীসহ এলাকাবাসী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় জনসচেতনতার অভাবে প্রতি বছরই দূষণ ও ভরাটের আগ্রাসনে পুরো বাঁওড় ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে পরিযায়ী অতিথি পাখির সংখ্যা।

সম্প্রতি শরীয়তপুর পৌরসভার তুলাসার গ্রামের তুলাসার বাঁওড়ে পরিযায়ী পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন দূষণ ও ভরাটের কারণে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমেই চলছে।

স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গীর কাছে প্রায় ১২ একর জায়গাজুড়ে তুলাসার বাঁওড়ের অবস্থান। প্রতি বছর বাঁওড়ে শীতের আগমনী বার্তা দেয় অতিথি পাখি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পাখির সংখ্যা। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে এখানে দেখা মিলে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাখি। চৈত্র মাসের শেষের দিকে পাখিরা এখান থেকে সুদূরের নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়। শীত মৌসুমে সকাল-সন্ধ্যা তুলাসার বাঁওড়সহ জেলার অন্তত ২০টি জলাশয়ে প্রায় ২৫ প্রজাতির পরিযায়ী অতিথি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পুরো এলাকা কিচিরমিচির শব্দের কলরবে মাতিয়ে তোলে।

অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ যে কাউকে এনে দিতে পারে প্রাকৃতিক প্রশান্তি। তাই প্রশান্তির খোঁজে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পাখিপ্রেমী মানুষের ভিড় জমে তুলাসার বাঁওড়ে। কিন্তু জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় এসব পরিযায়ী পাখিরা জীববৈচিত্র্য সহায়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও জনসচেতনতার অভাবে দূষণ ও ভরাটের কারণে তুলাসার বাঁওড়সহ জলাশয়গুলোতে পাখিবান্ধব পরিবেশ না থাকায় প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সরকারি ও বেসরকারি বিভাগসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পাখিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে পরিবেশকে সমৃদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল। সচেতন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন।

পাখি দেখতে আসা কাইফ কায়ানাত নামে একজন বলেন, ছোট বেলা থেকেই এখানে পাখি দেখতে আসি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখন পাখি কম দেখা যায়। আগে বাঁওড়টিতে এত বেশি পরিমাণ পাখি ছিল যে, পাখির জন্য পানি দেখা যেত না। পরিযায়ী এসব পাখি কমার অন্যতম কারণ দূষণ ও আবর্জনা। প্রশাসন যদি এসব দূষণ ও আবর্জনা দূর করতে পারত, তাহলে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেত।

শাহিন আলম নামে আরেকজন বলেন, বাঁওড়ের এই পথ ধরে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই দাঁড়িয়ে পাখিগুলো দেখি। পাখিগুলোর শব্দ শুনতে ভালোই লাগে। সবার কাছে অনুরোধ কেউ যেন পাখিগুলো না মারেন।

শ্যামসুন্দর দেবনাথ কবি ও লোকজ গবেষক। তিনি অতিথি পাখি দেখতে এসে বলেন, এক সময় তুলাসার বাঁওড়ে এসে অনেক সময় কাটাতাম। পাখি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আমি মনে করি, বাঁওড়ের চারপাশ দিয়ে ভরাট, দখল-বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে বাঁওড়ের চারপাশে বাঁধাই করে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা যায়। বাঁওড় রক্ষা করে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম গড়তে স্থানীয়, জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই।

শরীয়তপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বিল্লাল হোসেন খান বলেন, অতিথি পাখিরা তুলাসার বাঁওড়ে এসে মানুষের বিনোদনের জোগান দেয়। স্থানীয় সাংসদ ও পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সবারই ইচ্ছা আছে বাঁওড়টাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার। আমি দেখেছি একটু একটু করে অনেকেই বাঁওড় ভরাট করেছেন। আমি জানি না, কীভাবে তারা এই কাজ করেছেন। বাঁওড়ের পাশে যাদের বসবাস তারা যেন ময়লা আবর্জনা বাঁওড়ে না ফেলেন। শুধু পৌরসভা খেয়াল রাখলেই হবে না। তুলাসার বাঁওড়কে রক্ষা করতে স্থানীয় সবাইকে সচেতন হতে হবে। পৌরসভাসহ সচেতন সবাই বাঁওড় রক্ষায় কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, শরীয়তপুরে যে জলাভূমি আছে, সেগুলো কিছু কিছু জায়গায় ভরাট হয়েছে। একই সঙ্গে জলাভূমি নিয়ে মামলাও রয়েছে। মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এগুলো উন্নয়নে আমরা আপাতত কার্যক্রম করতে পারছি না। তারপরেও তুলাসার বাঁওড়সহ অন্যান্য বাঁওড়ে যে কচুরিপানা রয়েছে, তা পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তুলাসার বাঁওড়কে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। যাতে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ আমাদের ছেলে-মেয়েরা অতিথি পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে। আপনারা জেনে থাকবেন, অতিথি পাখি শিকার করা, বিক্রি করা অনেকটাই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। যেসব জায়গায় অতিথি পাখির বিচরণ রয়েছে, সেসব জায়গা রক্ষা করতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তারপরেও যদি খবর আসে অতিথি পাখির বিচরণস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।