দেয়ালে ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য

প্রতিনিধি, রাজশাহী : মাত্র ছয়জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করা কলেজটি সার্ধশত বছর পেরিয়েছে ক’দিন আগেই। ব্রিটিশ আমলে এটি ছিল ডাচ্দের বাণিজ্যিক কার্যালয়। ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যে টানা চতুর্থবারের মতো র?্যাংকিংয়ে শীর্ষ অবস্থান করছে কলেজটি। শুধু বর্তমানেই নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষা শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে এই বিদ্যাপীঠ। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা সবই জুড়ে রয়েছে এই প্রাচীন বিদ্যাপীঠে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে জাতীয় ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের অবদান অপরিসীম। জাতির প্রয়োজনে প্রতিটি গণআন্দোলনে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মরণীয় ভূমিকা কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরন্তর অবদানে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী কলেজ।

দেশসেরা এই কলেজটি শুধু নামেই ঐতিহ্যবাহী নয়; গ্রাম-বাংলার ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলতেও পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানটি। কলেজের প্রশাসন ভবনের সামনের দেয়ালে ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই কারুকার্যগুলো দেখলে যে কারোর মন ছুঁয়ে যাবে।

দেয়ালের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ, নাটোর রাজবাড়ী, ধুবালহাটি রাজবাড়ী, বালিহার রাজবাড়ী, রাজশাহীর বাঘা মসজিদ, রাজশাহী কলেজ, ভদ্র চত্বরের পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিগুলো এমনভাবে দেয়ালে ফুটে তোলা হয়েছে, যা দেখলে সবার মন জুড়িয়ে যাবে। কলেজের প্রবেশপথেই ঢুকতেই হাতের ডানে এ দেয়ালটিতে দেখা যাবে। সেখানে রয়েছে গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি, ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও সংস্কৃতি।

ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোসা. ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার গ্রাম-বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে এতটা ধারণা ছিল না, আমি এ দেয়াল চিত্র সামনে দাঁড়াতেই অনেক বাংলার সংস্কৃতি আমার চোখে পড়ে, আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেয়ালটির চিত্রগুলো দেখতে থাকি, রাজশাহী কলেজ এই দেয়ালটিতে এমনভাবে গ্রাম-বাংলার ইতিহাস চিত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যে কারও মনে সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি তৈরি করবে।

সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি বলেন, অতীতকাল থেকে বাংলাদেশে যে গ্রামনির্ভর সমাজ গড়ে উঠেছিল, তা লোকসংস্কৃতির গুরুত্ব বহন করে। আর এই লোকসংস্কৃতিতে লোকশিল্প বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে সম্ভাবনার পথকে সুগম করে। লোক-পরম্পরায় বিভিন্ন গোষ্ঠী বা বৃত্তির মানুষের এই লোকশিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে কখনও তাদের জীবিকার জন্য আবার কখনও তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বা কৃত্যাচারকে বজায় রাখার প্রয়োজনে। রাজশাহী কলেজেই এ দেয়াল যেন পুরোনো ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। মনে হয় গ্রাম-বাংলা ফিরে পেয়েছি।

রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক তিনি বলেন, গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরার মাধ্যমেই ইতিহাস তুলে ধরা যায়। এখনকার ছেলেমেয়েরা এই ইতিহাস সম্পর্কে অনেকে জানে না, যখন তারা এই দেয়ালের সামনে এসে এই চিত্রগুলো দেখবে, তখন তারা বুঝতে পারবে গ্রাম-বাংলার আসল ইতিহাস। একটি ছবির মাধ্যমে ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা সম্ভব, এই ইতিহাস নতুন প্রজš§কে আরও উজ্জ্বলময় করে তুলবে, আমাদের গ্রাম-বাংলার ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, এই দেয়ালচিত্রটির দিকে এক নজর দিলেই গ্রাম-বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে।