দেশব্যাপী ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন আজ লক্ষ্য ৭৫ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দিনে ৭৫ লাখ মানুষকে কভিডপ্রতিরোধী টিকা দেয়ার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী কডিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন আয়োজন করেছে সরকার। দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও তুলনামূলক কম বুস্টার (তৃতীয়) ডোজ কাভারেজ বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

গতকাল সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এ তথ্য জানান। এই ৭৫ লাখ টিকা বুস্টার (তৃতীয়) ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক জানান, এই ক্যাম্পেইন চলাকালে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি সিটি

করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলাগুলোর ওয়ার্ড পর্যায়েও কভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। এক দিনে প্রায় ৭৫ লাখ মানুষকে সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্যে সারাদেশে প্রায় ৬২৩টি স্থায়ী ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ক্যাম্পেইনে একসঙ্গে প্রায় ৩৩ হাজার ২৪৬ জন টিকাদানকর্মী এবং ৪৯ হাজার ৮৬৯ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। ক্যাম্পেইনে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার ৪ মাস পার হয়েছে এরূপ ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে এবং প্রথম ডোজ পাওয়ার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যারা দ্বিতীয় ডোজ নেননি এরূপ ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে পারবেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোয় বসবাসরত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, ভাসমান জনগোষ্ঠী, নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠী, পরিবহন ও কলকারখানাসহ সর্ব স্তরের শ্রমিক, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী, স্কুল-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ সব বিশেষ জনগোষ্ঠীকে কভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের টিকা নিশ্চিত করে সার্বিক সংক্রমণ হার হ্রাস করার মাধ্যমে জনজীবন ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্থিতিশীল করতে আমরা সফল হয়েছি। এরই ফলশ্রুতিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন পর খুলে দেয়া হয়েছে। চলমান মহামারি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের এই প্রয়াস বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, অচিরেই দেশের ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদেরও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে। সরকার এ বিষয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পরিকল্পনা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যান্য বয়সসীমার জনগোষ্ঠীর মতো ৫-১১ বছর শিশুদেরও সুরক্ষা ওয়েবপোর্টাল/অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ফাইভার কভিড-১৯ জ্যাকসিন প্রদান করা হবে।’

তিনি জানান, সুরক্ষা রেজিস্ট্রেশনের জন্য শিশুদের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের প্রয়োজন হবে। তাই তিনি দেশের অভিভাবকদের দ্রুত শিশুর ডিজিটাল জš§নিবন্ধন সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন একটি কার্যকর সমাধান। ভ্যাকসিন কভিড-১৯ জনিত মৃত্যুঝুঁকি কমায়। গবেষণা হতে পাওয়া তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যারা অন্তত ২ ডোজ ভ্যাকসিনের পাশাপাশি বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন, তাদের অধিকাংশেরই আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয়নি।’

দেশের ৭৬.০৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া ৭০.৩ শতাংশ দ্বিতীয় এবং ১৭.৯ শতাংশকে বুস্টার (৩য়) ডোজ দেয়া হয়েছে, যা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার দেশের আপামর জনসাধারণকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদানে বদ্ধপরিকর।’

তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ৫ ধরনের (অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক এবং জনসন ও জনসন) প্রায় ২.৭৮ কোটি ডোজ টিকা মজুত রয়েছে।