দেশি তুলার উৎপাদনে নীতিসহায়তা দিন

দেশি তুলার ওপর কর প্রত্যাহার চেয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টস ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশে তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা এবং দেশে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধিতে দুই মাসের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার। প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে তুলা সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। তুলার গুরুত্ব বিবেচনায় জাতিসংঘ প্রতি বছর ৭ অক্টোবরকে বিশ্ব তুলা দিবস হিসেবে অনুমোদন করেছে এবং এটি জাতিসংঘের স্থায়ী ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত।

প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে বিশ্বে তুলার উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারী কীভাবে উপকৃত হবে, তা তুলে ধরা হয় বিশ্ব তুলা দিবসের আয়োজনে। বলা হয়ে থাকে, এক টন তুলা আনুমানিক পাঁচ-ছয়জনের জন্য সারা বছরের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। তুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফসল, কারণ বিশ্বের কয়েকটি স্বল্পোন্নত দেশে দারিদ্র্য বিমোচনকারী ফসল, যা বিশ্বের মানুষকে টেকসই ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান জোগান দেয়। তুলাকে কৃত্রিম তন্তুর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় এটি কতটা পরিবেশবান্ধব। এটি দ্রুত পচনশীল, আমাদের জলপথে প্লাস্টিকের পরিমাণ হ্রাস করে এবং আমাদের মহাসাগরকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি একমাত্র কৃষিপণ্য, যা বস্ত্র ও খাদ্য উভয়ই সরবরাহ করে। তুলা শুষ্ক আবহাওয়ায় জন্মে, এতে পানিও কম খরচ হয়।

বিশ্বে তুলা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থকরী ফসল। বিশ্বে অন্তত ১০ কোটি বেশি মানুষ সরাসরি তুলা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত এবং ২৫-২৬ মিলিয়ন টন কাঁচা তুলা উৎপাদন করে, যেখানে প্রতি হেক্টরে গড়ে প্রায় ৮০০ কেজি আঁশতুলা উৎপাদিত হয়। বীজতুলা থেকে প্রথমত আমরা আঁশ পেয়ে থাকি। এ ছাড়া উপজাত হিসেবে বিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ কোটি টনেরও বেশি তুলাবীজ উৎপাদিত হয়। তুলাবীজ থেকে ভোজ্য তেল ও খৈল পাওয়া যায়। খৈল গবাদি পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। ১০০টিরও বেশি দেশ তুলা আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে জড়িত। তুলা উৎপাদন, জিনিং, টেক্সটাইল, গার্মেন্ট, ভোজ্যতেল ও সাবানশিল্প প্রভৃতির মাধ্যমে লাখ লাখ লোক জীবিকা নির্বাহ করে। তুলা বিশ্বের অন্যতম বস্ত্রতন্তু এবং তুলা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

তুলা চাষে গত বছর প্রথমবারের মতো প্রণোদনা দেয় সরকার। তুলার উৎপাদন বাড়াতে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রণোদনা দেয়ার কথা ছিল। ওই প্রণোদনা যথানিয়মে দেওয়া হয়েছে কি না বা পরবর্তী সময় প্রণোদনা দেয়া হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। প্রাকৃতিক তন্তু তুলা ব্যবহার দিন দিন কমছে। একসময় ৫০ শতাংশের বেশি প্রাকৃতিক তন্তু তুলার ব্যবহার ছিল, বর্তমানে তা ২৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আমরা মনে করি, দেশীয় তুলার ওপর কর প্রত্যাহারই যথেষ্ট নয়। তুলাচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে, উন্নত বীজ, সার ও নীতিসহায়তা দিতে হবে।