Print Date & Time : 8 September 2025 Monday 7:54 pm

দেশে এয়ারগান ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের জীববৈচিত্র্য, পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’-এর ৪৯ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এয়ারগান ব্যবহার বা বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ নির্দেশনা ১৪ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের পাঠানো  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণার কথা জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তীর সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২-এর ৪৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতা বলে এয়ারগান ব্যবহার বা বহন নিষিদ্ধ করা হলো।’এক্ষেত্রে শর্ত পরিপালনের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী, ‘জাতীয় শুটিং ফেডারেশনের নিবন্ধিত শুটিং ক্লাব ও বনাঞ্চল সন্নিহিত এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী, তাদের নিরাপত্তা, দৈনন্দিন প্রয়োজন ও সামাজিক প্রথার কারণে নিষেধাজ্ঞা আওতার বহির্ভূত থাকবে।’

প্রসঙ্গত, ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’-এর আওতায় বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এয়ারগান বহন বা কেনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম না থাকায় অনেকেই এই অস্ত্র কিনছে। এ ছাড়া এ অস্ত্র ব্যবসার ওপর কোনও নজরদারি নেই।

জানা যায়, হালকা ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বায়ুনির্ভর অস্ত্রের নাম ‘এয়ারগান’। এ বন্দুকটি কিনতে কোনো লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না বলে যে কেউ এটি কিনে পাখি শিকার করতে পারেন। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার চা বাগান ও পাহাড়ে এয়ারগান তুলনামূলক বেশি ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ারগানের অবাধ ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামাঞ্চল, পাহাড়ি জনপদসহ হাওর এলাকার চারপাশের ছোট থেকে মাঝারি আকারের পাখি। দেশের জীববৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এবং পাখির প্রজাতি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে বাংলাদেশে এয়ারগানের আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

এয়ারগান দিয়ে শিকারের ফলে চড়ুই, মাছরাঙা, দোয়েল, নীলকণ্ঠ, কুকো, ডাহুক, ছাতারে, কোড়া, হাঁড়িচাচা, সব রকমের শালিক, বসন্ত বৌরি, ঘুঘু, টিয়া, বুলবুলি পাখিসহ বাদুড়, কাঠবিড়ালি ও বেজি হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়া বনবিড়াল, তাল খাটাশ, বনো খরগোশ, তিন প্রজাতির গুঁইসাপ অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এয়ারগানের প্রভাবেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা।