প্রতিনিধি, রংপুর: দেশে দুর্ভিক্ষ হলে এর দায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার বিকালে রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ্ মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর আগে ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার খেতে না পেরে রাস্তায় পড়েছিল। এখন আবার সেই অবস্থা ফিরে এসেছে। ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়াতে চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাকসবজিও মানুষ কিনতে পারছে না। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ।
তিনি আরও বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক মিডিয়া এই সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে। সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না। ভয় না পেলে গাড়ি কেন বন্ধ করতে হয়। কেন আমাদের নেতাদের গুলি করে মারে?
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী সরকার গত ১৫ বছরে সব শেষ করে ফেলেছে। সব ক্ষেত্রে চুরি করেছে আওয়ামী লীগ। এমনকি আশ্রয়ণ প্রকল্পেও চুরি করেছে। আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আলেম-ওলামাদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। এদের কি আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায়?
নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার পর শনিবার রংপুরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বেলা ২টায় বিভাগীয় এ গণসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের সোয়া দুই ঘণ্টা আগে বেলা পৌনে ১২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শেষে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে গণসমাবেশ শুরু হয়ে যায়। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে বাস চলাচল বন্ধের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। তারা বলেছেন, সরকার কৌশলে গণপরিবহন বন্ধ করে জনগণের জয়যাত্রা ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। পরিবহন ধর্মঘট প্রমাণ করেছে, আর কোনো বাধাই কাজে লাগবে না। এখন সরকারকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে, অথবা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে থাকতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ বলেন, মানুষ এক মুহূর্তও এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে চাইছে না। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে। সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখে আওয়ামী লীগ নেতাদের কম্পন শুরু হয়েছে।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এ সমাবেশ ঘিরে রংপুর বিভাগের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, এতেই মনে হয় সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। রংপুরের মানুষ পাটি বিছিয়ে রাস্তায় ছিলেন। তারা বহুমাত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছেন। প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ দেয়া হবে।
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুফুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, রংপুরে বিএনপির গণজাগরণ শুরু হয়েছে। এ জয়যাত্রা ঠেকানো যাবে না।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খেলা হবে। আমরাও বলি, খেলা হবে। এই জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিজয়ী হবে।’
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোয়েম সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, ‘বাস বন্ধ করে কি জনগণের জয়যাত্রা রুখতে পেরেছেন?’ তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন গত ৮ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে আহত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তুষার আহমেদ। তিনি বলেন, ‘চোখ গেছে কষ্ট নেই, এই জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। তারা আমাদের চোখ নিয়েছে, তাদের ছাড় নেই।’
এদিকে বিএনপির রংপুর এই বিভাগীয় গণসমাবেশে গিয়ে মারা গেছেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫)। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশস্থলে তিনি মারা যান। কাহারোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গণসমাবেশে যোগ দিতে সকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মোস্তাফিজুর কাহারোল থেকে রংপুরে যান। এরপর ৪টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন গোলাম মোস্তফা।