দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫-এর শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার।  বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ইউএইসহ রেকর্ডসংখ্যক ৪০টি দেশের খ্যাতনামা বিনিয়োগকারীরা

এতে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী ও নীতিনির্ধারকরাও এতে অংশ নেন।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত নামিদামি ব্র্যান্ড ইন্ডিটেক্স গ্রুপ, ডিপি ওয়ার্ল্ড, জিওডারনো ও এক্সিলারেট এনার্জিসহ কোম্পানির অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী কোম্পানির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। আন্তর্জাতিক মহাযান সংস্থা নাসার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ করা হবে। বিনিয়োগ পেতে করা হবে ধারাবাহিক মনিটরিং। গতকাল বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ সম্মেলনের সমাপনী প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগকারী যারা বাংলাদেশে এসেছেন তারা যেন সত্যিকারের বিনিয়োগ করে, সেজন্য তাদের আমরা ধারাবাহিকভাবে মনিটরিং করব। বিনিয়োগকারীরা সাধারণত ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় নেন বিনিয়োগ করতে, তাদের সঙ্গে আমরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধরে যোযোগাযোগ করব।’

আমাদের এখানে সাড়ে ৫০০ রেজিস্ট্রেশন ছিল; এর মধ্যে প্রায় ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ বিদেশি প্রতিনিধি এসেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দুজন প্রতিনিধি এসেছেন। পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীর তথ্য আমরা পরবর্তীতে জানাব।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন। নীতির ধারাবাহিকতা, একসেস টু রিসোর্স ও দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আমাদের রয়েছে, তা দূর করার চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু এনবিআর নয়, সরকারি সেবায় ধীরগতি আছে। আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। এনবিআরের গ্রিন চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামিট উপলক্ষে চীনা আরএমজি প্রতিষ্ঠান হান্ডার সঙ্গে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া শপআপ ১১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের তৃতীয় দিন ৯ এপ্রিল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিনিয়োগ সম্মেলনটি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ও ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সম্মেলনের শেষ দিনে এসে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মনে প্রশ্নÑবহুল আলোচিত এ বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রাপ্তি কতটুকু? সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কত মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে? যদিও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব-নিকাশ নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশে বিনিয়োগের মোটেও পরিবেশ নেই। তাদের এই মনে করার পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। অতীতের সরকারের আমলে অনেক বিনিয়োগকারী এদেশে বিনিয়োগের ইচ্ছা নিয়ে এলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নানা হয়রানি ও অসহযোগিতার কারণে ফিরে গেছেন।

আশিক চৌধুরীর ভাষায়, সম্মেলন শেষে অংশগ্রহণকারী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ (অর্থাৎ দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রযুক্তিগত ভৌগোলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে একটি সমন্বিত, বিস্তৃত ও ভারসাম্যপূর্ণ চিত্র উপস্থাপন) নিয়ে ফিরে যান, এটিই এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

বিনিয়োগ সম্মেলন প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তারা বিভিন্ন ফ্যাক্টরির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা জেনেছেন। বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিতে বিশ্বাসী নয় বিডা। আগামী ১০-১৫ বছর পর এ সম্মেলনের ফলাফল পাওয়া যাবে। ‘এবারের সম্মেলনে যেসব বিনিয়োগকারী এসেছেন তাদের তালিকা তৈরি করে আগামী ৬ থেকে ১৮ মাস নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত ও অনুরোধ করা হবে।’

বিডা চেয়ারম্যান বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আর কী কী করতে হবে। জবাবে অধিকাংশই একমত দিয়েছেন যে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেশি বেশি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিসরে না হলেও ক্ষুদ্র পরিসরে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে।