নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে চলা লকডাউনে সারাদেশে গতকাল দোকানপাট ও শপিংমল খুলেছে। টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলল দোকান ও শপিংমল। রাজধানীর রাস্তাগুলোয় গতকাল সকাল থেকেই ভিড় বেশি ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে উদাসীনতা দেখা গেছে।
সকাল ১০টার দিকে নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দোকানগুলো খোলা শুরু হয়েছে। যারা খুলেছেন, তারা ঝাড়ামোছার কাজ করছেন। এরই মধ্যে কোনো ক্রেতা এলে তাও সামলাচ্ছেন কেউ কেউ। ফেয়ার সুজ নামের দোকানের মালিক বিল্লাল হোসেন ঠিক ১০টায় দোকান খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যে এসে দোকান খুলল। কতটা ব্যবসা করতে পারব জানি না। কারণ, এখন অনেক গরম। বিকাল ৫টায় বন্ধ করতে হবে। ইফতারের পরেই আসলে মানুষ বেশি আসে। তারপরও কিছু বেচাবিক্রি হয়তো হবে।’
চাঁদনী চকের মৌমি ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. রবিন বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ। কাছের মানুষ যারা, তারাই আসবে। দূরের ক্রেতারা আসতে পারবে না। বাস চলাচল শুরু হলে হয়তো বেচাবিক্রি বাড়বে। পুলিশ জানিয়েছে, শপিংমল ও দোকানে যেতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুভমেন্ট পাস নিতে হবে। এ বিষয়ে নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া মার্কেটের দোকানিরা জানান, কাউকে কোনো কিছু দেখাতে হয়নি। পুলিশও কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। এছাড়া তারা সবাই আশপাশে থাকেন।’
আমিনা আহমেদ একটি বড় ব্যাগ নিয়ে গাউছিয়ায় ঘুরছেন। তিনি বলেন, তিনি কাপড় কিনে এবার কিছু পোশাক বানাবেন। তাই সকাল সকাল চলে এসেছেন ভিড় এড়াতে।
বসুন্ধরার শপিংমলে দেখা যায়, ক্রেতার সমাগম এখনও শুরু হয়নি। রাইসা ফ্যাশন নামের দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. সাব্বির বলেন, রোজার মাঝামাঝিতে দোকান খুললেও কিছুটা ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে সকাল ১০টার সময় শত শত মানুষকে পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গাদাগাদি করে ভ্যানে করে অনেকেই গন্তব্যস্থলে রওনা দিয়েছেন। একই চিত্র দেখা গেছে, রাজধানীর সুপার মার্কেটের সামনে। সেখানে রীতিমতো যানজট দেখা দিয়েছে। গুলিস্তান ফিরে গেছে পুরোনো রূপে। ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন হকাররা। গুলিস্তান মোড়ে যান চলাচল বেড়েছে। পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে মানুষের ভিড় বেড়েছে অনেক। দোকানপাটও খোলা রয়েছে। যাত্রাবাড়ীর তাজ সুপার মার্কেটে শতাধিক দোকান খোলা দেখা গেছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম। সেখানকার বিক্রয়কর্মী ইব্রাহিম বলেন, টানা ১১ দিন বন্ধের পর আজ তারা দোকান খুলেছেন। এখনও ঈদের বাকি আছে অনেক দিন। আশা করছেন বাকি দিনগুলোয় ক্রেতা পাবেন। যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কোনো পরিবহন না পেয়ে একটি ভ্যানে উঠেছেন আব্দুল হাকিম। ওই একই ভ্যানে আরও ছয়জন উঠে পড়েন। পরে ভ্যানটি পুরান ঢাকার দিকে রওনা হয়।
আব্দুল হাকিম বলেন, টানা ১১ দিন বন্ধ থাকার পর দোকান খুলেছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু রাস্তায় বাসসহ যানবাহনের সংখ্যা কম। বাধ্য হয়েই তিনি স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে তিনি নিজেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা তিনি দেখছেন না। রাজধানী বঙ্গবাজারে এনেক্স সুপার মার্কেটে দেখা গেল, দোকানপাট সব খোলা, কিন্তু ক্রেতা নেই। সেখানকার হাওলাদার গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী সাগর বলেন, অনেক দিন বন্ধ থাকার পর আজ আবার তারা দোকান খুলেছেন। তবে কোনো ক্রেতা নেই। এটি পাইকারি বাজার। তাই তিনি আশা করছেন, দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে। তারা মাস্ক পরেছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন। ক্রেতারাও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করেন, সে ব্যাপারে তারা সতর্ক রয়েছেন।